BRAKING NEWS

জনজাতিদের বিকাশ ছাড়া রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয় : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুলাই৷৷ রাজ্যের বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যের জনজাতি অংশের জনগণের শিক্ষা-সংস্কৃতি উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ কারণ জনজাতিদের উন্নয়ন ছাড়া রাজ্যের সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ ইন এডুকেশন ও কোলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইন্সটিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে ‘ভারতে জনজাতি শিক্ষা, সমস্যা ও চ্যালে’ শীর্ষক দু’দিনের জাতীয় আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ তিনি বলেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনজাতি অংশের লোক ভারতে বাস করে৷ এরমধ্যে উত্তর- পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই জনজাতি অংশের লোক সবচেয়ে বেশী৷ ইংরেজদের ২০০ বছরের শাসনকালে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ ভারতের অন্যান্য অংশের জনজাতি জনগণ শিক্ষা-সংসৃকতির দিক দিয়ে বঞ্চিত ছিল৷ তখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত অংশের জনগণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ ইংরেজরা জনজাতিদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে তেমন গুরুত্ব দেয়নি৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠি রয়েছে৷ প্রত্যকটি জনজাতি গোষ্ঠির আবার নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ম রীতিনীতি রয়েছে৷ রাজ্য সরকার জনজাতিদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি গুণগত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষী বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে তপশিলী জাতি কল্যাণ ও উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের অর্থ বরাদ্দও বৃদ্ধি করেছেন৷ শুধু তাই নয়, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন৷ এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি করে থাকেন৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন উদ্যোগ নেননি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ১২টি জনজাতি অধ্যষিত ব্লকের গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের বি ডি ও দের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি রূপায়ণে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে৷ বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি দিল্লীতে আই এ এস পরীক্ষার কোচিং এর ব্যবস্থা করেছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মোট ৩৪০ জন ছাত্রছাত্রীকে আই এ এস কোচিং নেওয়ার জন্য দিল্লীতে পাঠানো হয়েছে৷


বিগত সরকার রাজ্যের জাতি জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে সঠিক গুরুত্ব দেয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষকে বিশ্বের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপকে পূরণ করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারও রাজ্যের শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ জনজাতি অঞ্চলে শিক্ষার মানোন্নয়নে রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার জন্য এদিন আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ দুই দিনের এই আলোচনাচক্রের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব বাস্তবে কার্যকর হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন৷


অনুষ্ঠানে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইন্সটিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসার সুুজিত কে ঘোষ বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করে থাকে৷ দু’বছর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণামূলক কর্মসূচিগুলি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি মধ্যে সম্পসারণ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷ সেই মোতাবেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে৷ ত্রিপুরাতেও এই ধরণের ৩টি কর্মসূচি সংগঠিত করা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত ৫টি জাতীয় কার্যক্রম যেমন, ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ, মহাত্মাগান্ধীর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী, গুরুনানকের ৫৫০ তম জন্মজয়ন্তী এবং কার্গিল বিজয় দিবসের ২০তম বর্ষ, এই প্রতিষ্ঠান যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পালন করেছে৷ তিনি আরও বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বিরাট সংখ্যক জনজাতি অংশের জনগণ রয়েছে৷ তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ আমাদের এই প্রতিষ্ঠানও কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অনুসারে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতি অংশের জনগণের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করছে৷


অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কুঞ্জবনস্থিত ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ ইন এডুকেশনের অধ্যক্ষা ড. রত্না রায়, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা সাজ ওয়াহিদ এবং আগরতলার ইগনৌর আঞ্চলিক অধিকর্তা ড. কিরণ শঙ্কর চক্রবর্তী৷
অনুষ্ঠানে কার্গিল যুদ্ধের শহীদ বীর জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *