নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ জুলাই৷৷ রাজ্যে যেখানে দুধের ভালো যোগান রয়েছে সেখানে ডেয়ারি প্ল্যান্ট বসানো যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ দুগ্দ শিল্পের মাধ্যমে ত্রিপুরায় নয়া অর্থনেতিক বিপ্লব চাইছেন তিনি৷ তাই, শীঘ্রই এই কাজটি সম্পন্ন করতে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বুধবার রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে রাজ্যের যে সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে সেই সব প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হন৷ সচিবালয়ে আয়োজিত বৈঠকে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ, উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ, প্রাণীসম্পদ বিকাশ, পর্যটন, শিক্ষা, মৎস্য, বন, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি ৩৩টি দফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এমন কেন্দ্রীয় প্রকল্পসমূহের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি পর্যালোচনা করেছেন৷
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী দেব বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে চালু রয়েছে এমন প্রকল্পগুলির মধ্যে যেগুলিই রাজ্যে রূপায়ণ করার সুযোগ রয়েছে এমন সকল ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দফতরকে এর সুযোগ নিতে উদ্যোগী হতে হবে৷ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে আর্থিক অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রতিটি দফতরকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সাথে যথাযথ সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন স্বাস্থ্য দফতরের কাজের পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত-এ যেখানে বিনামূল্যে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে তা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মিশন মুডে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ পর্যটন দফতরের প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারিকেলকুঞ্জ ও ডম্বুর জলাশয় রাজ্যের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির মতো আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র৷ একে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সেখানকার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ের সার্বিক উন্নতিকল্পে বিশেষ নজর দিতে হবে৷
হস্ততাঁত ও রেশম শিল্প দফতরের প্রকল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে ক্লাস্টার পদ্ধতিকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন৷ প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রকল্প পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুধের ভালো যোগান যেখানে রয়েছে সেখানে নতুন ডেয়ারি প্ল্যান্ট বসানো যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী দেব আগরতলার মতো অন্যান্য জেলা সদরে কর্মরত মহিলাদের জন্য হোস্টেল চালু করা যায় কিনা তা-ও খতিয়ে দেখতে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দফতরের সচিবকে নির্দেশ দেন৷
এদিনের সভায় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনার পাশাপাশি এ-সব প্রকল্প খাতে ২০১৮-১৯ এবং চলতি আর্থিক বছরের (২০১৯-২০) কেন্দ্রীয় আর্থিক বরাদ্দ উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করার পর ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত স্ট্যাটাস নিয়ে প্রকল্প ভিত্তিক অনুপুঙ্খ আলোচনা করেন মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরলু৷ ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বরাদ্দকৃত অর্থের উপর যে সকল দফতর এখনও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পারেনি তার উপর আলোকপাত করেন মুখ্যসচিব৷
এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য দফতর সচিবদের নির্দেশ দেন তিনি৷ এদিনের সভায় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার অলক ও মনোজ কুমার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনায় অংশ নেন৷ এদিনের সভায় কৃষি দফতরের সচিব এমএল দে জানান, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে কৃষি দফতরে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ ছিল ১৪৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা৷ চলতি বছরেও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ১৩০ কোটি ২০ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ তিনি জানান, হর্টিকালচারেও চলতি বছরে ৩১ কোটি ৯ লক্ষ টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন দফতর কর্তৃক উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে যে যে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে তার স্ট্যাটাস নিয়েও সভায় আলোচনা করা হয়৷
সভায় উল্লেখ করা তথ্যে দেখা যায়, ২৫টি দফতরের মোট ৮৪টি এ-ধরনের প্রকল্প কেন্দ্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে পাঠানো হয়েছে৷ এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ যে সকল ক্ষেত্রে এখনও কেন্ত্রীয় অনুমোদন পাওয়া যায়নি সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ এদিনের সভায় প্রধানসচিব শশীরঞ্জন কুমার, এল এইচ ডার্লং, বি কে সাহু, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহানির্দেশক রাজীব সিং, বিশেষ সচিব কিরণ গিত্যে, চৈতন্য মূর্তি, সচিব রামেশ্বর দাস, সৌম্যা গুপ্তা, সমরজিৎ ভৌমিক, ড় দেবাশিস বসু, এন ডার্লং, মুখ্য বন সংরক্ষক ড় অলিন্দ্য রস্তোগি প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন৷ এছাড়াও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন৷