BRAKING NEWS

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও যথেষ্ট সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও পূর্বোত্তরে কৃষক-আত্মহত্যা, শীর্ষে অসম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ত্রিপুরা ও সিকিম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জুলাই ৷৷ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও পূবর্োত্তরে কৃষক আত্মহত্যা উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে৷ কৃষক আত্মহত্যায় পূর্বোত্তর আট রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অসম৷ এর পরেই স্থান ত্রিপুরা ও সিকিমের৷ কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে সারা দেশের সাথে সাযুজ্য রেখে পূবর্োত্তরে কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে৷ তাই, কৃষক আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান খুবই প্রয়োজন বলেও মনে করা হচ্ছে৷


সাংসদ প্রতিমা ভৌমিকের এক প্রশ্ণের জবাবে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রী নরেন্দ্রসিং তোমার লোকসভায় জানিয়েছেন, মৌসম বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪,০৩০.৯০ এমএম, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫,৯০১.৯০ এমএম, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫,৪৯৬.৬০ এমএম, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০,৩১০.৬০ এমএম এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪,২৮৫.১০ এমএম বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামে সারা দেশের তুলনায় যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ এতে ফসল উৎপাদনে আইসিএআর-এর পরামর্শ মতো কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি৷ তাঁর কথায়, ফসল উৎপাদনে আবহাওয়ার অনুকূল বীজ সরবরাহ করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনে কোনও প্রভাব যাতে না পড়ে সেদিকে নজর রেখে পূবর্োত্তরের ৯১টি জেলায় সিআরআইডিএম এবং রাজ্যসমূহের কৃষি মহাবিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া, প্রতি সপ্তাহে কৃষি এবং কৃষকদের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷


কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, উৎকৃষ্ট বীজ সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাছাড়া, কৃষকদের ভরতুকি মূল্যে কৃষি সামগ্রী সরবরাহে ব্যবস্থা নেওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন৷ তিনি জানান, ধান ছাড়াও বিভিন্ন দানা-শস্য ও সবজি উৎপাদনে আবহাওয়ার তারতম্যের বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করে তোলাই কেন্দ্র লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে৷ কারণ, মরশুমি ফলনে অধিক দর পাওয়া যায়, তা কৃষকদের বোঝানো হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, পূবর্োত্তরে সেচের বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না৷ কারণ, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত সেই চাহিদা মিটিয়ে দিচ্ছে৷


এদিন তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা কৃষক দারুণভাবে উপকার করেছে৷ এই যোজনায় প্রচুর কৃষক দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পেরেছেন৷ তাছাড়া, প্রাকৃতিক দুযর্োগে এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ-এর সহযোগিতা সময় মতো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ তাঁর কথায়, প্রাকৃতিক দুযর্োগের কারণে রাজ্যসমূহের প্রস্তাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার সহযোগিতা করেছে৷ তাতে স্পষ্ট, কৃষি ও কৃষক কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার সব রকমের সহযোগিতা করেছে৷ সেচের অভাবেও পূবর্োত্তরে কৃষিকাজে সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি কৃষকদের৷


তবুও, পূবর্োত্তরে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন৷ বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক, তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ সাংসদ অশোককুমার রাওয়াতের প্রশ্ণের জবাবে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রী লোকসভায় জানিয়েছেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সর্বশেষ রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি৷ তবে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে কৃষক আত্মহত্যার তথ্য উঠে এসেছে৷ তিনি জানান, পূবর্োত্তরে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে অসমে সবচেয়ে বেশি কৃষক, কৃষি-শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন৷ এর পরেই রয়েছে ত্রিপুরা ও সিকিম৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, অসমে ২০১৪ সালে ৫৯ জন এবং ২০১৫ সালে ১৩৮ জন কৃষক ও কৃষি-শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন৷ তেমনি ত্রিপুরায় ২০১৪ সালে ৩২ জন এবং ২০১৫ সালে ৪৯ জন কৃষক ও কৃষি-শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন৷ প্রায় একই অবস্থা সিকিমেরও৷ সেখানে ২০১৪ সালে ৩৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১৮ জন কৃষক ও কৃষি-শ্রমিক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷ তিনি জানান, প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, পূবর্োত্তরের অন্যান্য রাজ্যে এই প্রবণতা অনেক কম৷ তাঁর কথায়, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে অরুণাচল প্রদেশে ১৩ জন, মিজোরামে ৬ জন, মেঘালয়ে ৫ জন এবং মণিপুরে ১ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ নাগাল্যান্ডে একজনও আত্মহত্যা করেননি৷ ফলে এ-কথা স্পষ্ট, পূবর্োত্তরে অসম, ত্রিপুরা এবং সিকিমে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটেছে৷
কৃষি বিজ্ঞানিদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে শুধু ফসল বিক্রিতে ভাটা দায়ী হতে পারে না৷ কারণ, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ভৌগলিক কারণেই কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরা আইসিএআর-এর জনৈক আধিকারিকের কথায়, প্রচুর কৃষক পারিবারিক কারণে আহত্মহত্যা করে থাকেন৷ তাঁর দাবি, অনেক ক্ষেত্রে ঋণের বোঝা টানতে ব্যর্থ হয়েও আত্মহত্যা করেছেন তাঁরা৷ কিন্তু, এর সমাধান কোনওভাবেই সম্ভব নয়৷ তাঁর মতে, আত্মহত্যা একধরনেরর মানসিক ব্যাধি৷ ফলে, পরিস্থিতির চাপ সহ্য করতে না পেরেই মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন৷ তাছাড়া, গরিবি-রেখার নীচে যারা বসবাস করেন তাঁদের অধিকাংশের কাছেই শিক্ষার আলো পৌঁছেনি৷ ফলে, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজ তাঁরা রপ্ত করে উঠতে পারেন না৷ তবে, মানুষের জীবনশৈলীও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ, দাবি করেন তিনি৷ ফলে, শুধু সরকারি সুযোগ সুবিধা যথেষ্ট নয়৷ বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হলেই তাঁরা নানাভাবে উপকৃত হবেন৷ সাথে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমবে, মনে করেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *