বেঙ্গালুরু, ১৫ জুলাই (হি.স.) : গত দু’সপ্তাহে কর্ণাটকে শাসক কংগ্রেস-জেডিএস জোটের ১৮ জন বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন। এরপর সোমবার সকালেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী বলেন, তাঁর সরকার স্থিতিশীল। তিনি বিধানসভায় গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে তৈরি। বিরোধী নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা স্পিকারকে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন এবং এদিনই গুরুত্ব দিয়ে এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করা হোক। পরে বিধানসভায় স্পিকার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন এবং ওইদিনই আস্থা প্রস্তাবের দিন ঘোষণা করেন। ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী ১৮ জুলাই বেলা ১১ টায় বিধানসভায় আস্থাভোট হবে।
শুক্রবারই কংগ্রেস ও জেডিএস তাদের বিধায়কদের বিভিন্ন রিসর্টে সরিয়ে নিয়ে যায়। অভিযোগ, বিজেপির থেকে বিধায়কদের বাঁচাতে আলাদা রাখা হয়েছে। কুমারস্বামী বলেন, আমি একেবারেই উদ্বিগ্ন নই। আস্থাভোটে জয় নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। কংগ্রেস ও জেডি এস জোট এখনও বিদ্রোহী বিধায়কদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জোটের ১৬ জন ও দুই নির্দল বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন। স্পিকার কে রমেশ কুমার এখনও ইস্তফা গ্রহণ করেননি। গত শুক্রবার তিনি সুপ্রিম কোর্টে বলেন, সকলে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিতে চাইছেন নাকি কেউ তাঁদের ভয় দেখিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য করছে, খতিয়ে দেখা দরকার। সেজন্য তাঁর কিছু সময় প্রয়োজন।
স্পিকার যদি ইস্তফা গ্রহণ করেন তাহলে শাসক জোটের বিধায়কের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০০। বিধানসভায় গরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজন হবে ১০৫ জনের সমর্থন। বিরোধী বিজেপির এখনই ১০৫ জন বিধায়ক আছেন। তাছাড়া দুই নির্দল বিধায়কও তাদের সমর্থন করবেন। গত ৬ জুলাই ১০ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছিলেন। তাঁদের মুম্বইয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁরা আছেন পাঁচতারা রেনেসাঁস হোটেলে। বিধায়করা এদিনই মুম্বই পুলিশকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, কংগ্রেস নেতারা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাইতে পারেন। তাঁদের যেন হোটেলে ঢুকতে না দেওয়া হয়।
কোর্টের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী বিধায়করা মুম্বই থেকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দ্বিতীয়বার স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসেন। কারণ স্পিকার বলেছিলেন, এর আগে যে ইস্তফাপত্রগুলি জমা পড়েছে, তা যথাযথভাবে লেখা হয়নি। বিদ্রোহীরা সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন, স্পিকার কংগ্রেসকে সময় দেওয়ার জন্য ইস্তফা নিতে টালবাহানা করছেন। গত সপ্তাহে কংগ্রেসের ‘ট্রাবল শুটার’ ডি কে শিবকুমার রেনেসাঁস হোটেলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু পুলিশ তাঁকে হোটেলে ঢুকতে দেয়নি।
বিধানসভার অন্যান্য কাজের আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রমাণ করা উচিত মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর। সোমবার এমনই দাবিও করেছেন বিজেপি বিধায়ক সুরেশ কুমার।
এদিন বিধানসভা চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুরেশ কুমার বলেন, রাজ্যবাসীর কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রমাণ করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর। তিনি নিজের স্পিকারকে এই বিষয়ে সময় নির্ধারণ করতে বলেছেন। প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করুন। তারপর বিধানসভার অন্যান্য কাজ হবে। পাশাপাশি বিজেপির ১০৫ জন বিধায়ক যে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, তাও স্পষ্ট করে দেন রাজাজিনগরের বিধায়ক সুরেশ কুমার। দলীয় কোন্দল যে বিজেপির মধ্যে নেই তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। এদিন এর আগে বেঙ্গালুরুর তাজ ভিভান্তা হোটেলে বৈঠকে বসে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সদস্যরা।
উল্লেখ করা যেতে পারে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের ১৬ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক ইস্তফা দেওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে রাজ্য সরকারে। পাশাপাশি দুই নির্দল বিধায়কও নিজেদের সমর্থন জোট সরকার থেকে প্রত্যাহার করে বিজেপিকে জানিয়েছে। রবিবার বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি সৎ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি যদি দায়বদ্ধ হন তবে অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি সোমবার আস্থা ভোটের আয়োজন করারও দাবি জানিয়ে ছিলেন বর্ষীয়ান এই বিজেপি নেতা। তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস-জেডিএস জোটের ১৬ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছে এবং দুই নির্দল বিধায়ক জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে বিজেপিকে দিয়েছে। ফলে কুমারস্বামী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই আস্থা ভোট বা ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই কুমারস্বামীর।