বিজেপির প্রচারে সশস্ত্র হামলায় উত্তপ্ত ধর্মনগর রক্তাক্ত সাত যুবকর্মী, পুড়ল ১২টি বাইক, গাড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জুলাই ৷৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে উত্তর জেলার ধর্মনগরে পশ্চিম চন্দ্রপুর এলাকা৷ রবিবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন শাসক দল বিজেপির যুব সংগঠনের কর্মীরা৷ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১২টি মোটরবাইক এবং একটি গাড়ি৷ তাছাড়া আরও কয়েকটি বাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে হামলাকারীরা৷ আক্রমনে বিজেপির ৭ জন কর্মী আহত হয়েছেন৷ তাদের প্রথমে ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে ২ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় আগরতলায় জিবি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে৷


এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাট করছে৷ এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন৷ ধর্মনগরের বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ আক্রমণকারীরা নেশা কারবারী এবং সিপিএমের কট্টর সমর্থক বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববন্ধু সেন৷ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি৷


ঘটনার বিবরণে জানা গেছে বিজেপি যুব মোর্চার ২৫/৩০ জন কর্মী রবিবার পশ্চিম চন্দ্রপুর এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বাইক নিয়ে প্রচারে বের হন৷ তখনই সিপিএমের খাস তালুক বলে পরিচিত পশ্চিম চন্দ্রপুর এলাকায় দাগী নেশা কারবারী দুলো মিঞা ও তার ভাই ফজলু মিঞার নেতৃত্বে বিজেপির কর্মীদের উপর দা, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে সংঘবদ্ধ হামলা চালানো হয়৷ ঘটনার আকষ্মিকতায় বিজেপির কর্মীসমর্থকরা হতভম্ভ হয়ে পড়েন৷ কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তাক্ত হন ৭ জন যুবকর্মী৷ তাঁদের বাইকগুলিতে স্থানীয় দুবৃত্তরা অগ্ণিসংযোগ করে৷ ১২টি বাইক পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়৷ এছাড়া কিছু বাইক হামলাকারীরা সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ৷ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনী ছুটে যায়৷ পরিস্থিতির মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে৷ উত্তর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেন্সিং ডার্লং, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজীব সূত্রধর এবং ধর্মনগর থানার ওসি বিশাল বাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷


দলীয় কর্মীদের উপর হামলার খবর পেয়ে এলাকার বিধায়ক তথা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দাগেন৷ তিনি অভিযোগ করেন, নেশা কারবারী দুলু মিঞা ও ফজলু মিঞার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ এনেছেন খোদ বিধানসভার উপাধ্যক্ষ৷ মধ্যে দুলু মিঞা ও তার ভাই ফজলু মিঞা ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজা সহ অন্যান্য নেশা সামগ্রী পাচার বাণিজ্যে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বলে অভিযোগ৷ সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক বলেও উল্লেখ করেছেন উপাধ্যক্ষ৷ তাদের আশকারাতেই এধরনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলেও অভিযোগ৷
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ধর্মনগরে ছুটে যান পুলিশের ডিআইজি৷ পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছে পুলিশ৷ যেকোন সময় ফের রাজনৈতিক হিংসা চরম আকার ধারণ করতে পারে৷ এদিন সন্ধ্যায় ধর্মনগরে সিপিএম জেলা ও মহকুমা অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে৷


অন্যদিকে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর তরফ থেকে সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এদিন দুপুরে ধর্মনগর শহর থেকে ৩০-৩৫টি বাইকে করে বিজেপির দুর্বৃত্তরা চন্দ্রপুর গাঁওসভার উপপ্রধান এবং পার্টি নেতা দুলু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়৷ পঞ্চায়েত সদস্য কবির হোসেনের গাড়ি ভাঙচুর করে৷ গত ৩রা জুলাই রাতে বিজেপি দুর্বৃত্তরা ওই গ্রামে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই এলাকা থেকে কেউ বামফ্রন্টের প্রার্থী হলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে৷ গ্রামবাসীরা এর প্রতিবাদ করেন৷ আজ বাইরের এই দুর্বৃত্তদের বাড়ি বাড়ি হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীরা শহর থেকে আসা বিজেপির দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসে৷ এতে বহিরাগত এবং গ্রামবাসীদের কয়েকজন আহত হয়েছে৷


বিজেপির দুর্বৃত্ত বাহিনী শহরে ফিরে সিপিএম জেলা ও মহকুমা দপ্তরের সমস্ত আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং লুটপাট চালায় বলে সিপিএম প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে৷ শহরে হাঙ্গামা সংগঠিত করার পর আশপাশ এলাকা থেকে আরও লোকজন নিয়ে সন্ধ্যায় আবার বিজেপি বাহিনী চন্দ্রপুর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়, দোকান ও অটো-টমটম ভাঙচুর করে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ করেছে৷ পাশাপাশি এই ঘটনার জন্য সিপিএম তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে৷