নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ৪ জুলাই৷৷ মাদক বিরোধী অভিযানে ফের সাফল্য পেল ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসন৷ এই অভিযানে বৃহস্পতিবার প্রচুর পরিমাণের ব্রাউন সুগার নিয়ে পাচার করতে গিয়ে চোরাইবাড়িতে পুলিশ ও গোয়েন্দা আধিকারিকদের হাতে আটক হয়েছে করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পাথারকান্দির দুই ড্রাগস পাচারকারী যুবক৷ ধৃতদের বিলাল আহমেদ ও জহরুল ইসলাম বলে পরিচয় পাওয়া গেছে৷ উভয়ের বয়স যথাক্রমে ২৬ এবং ২৭৷ তাদের বাড়ি পাথারকান্দির চাঁদখিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচ নম্বর (কচরঘাট গ্রাম) ওয়ার্ডে৷ ধৃতদের বর্তমানে উত্তর ত্রিপুরার চোরাইবাড়ি থানায় রেখে পুলিশ টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে৷
জানা গেছে, আজ কাকভোরে পাথারকান্দির দুই যুবক এএস ১১ জি ০২৪০ নম্বরের একটি মটর বাইকে চেপে অসমের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থানান্তর্গত চাঁদখিরা-কদমতলা রোডে সোনাখিরা পুলিশ চেকপোস্ট এবং কাঁঠালতলি পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত কর্মীদের চোখে ধুলো দিয়ে ঝেরঝেরি নাকাচেকিং পার হয়ে উত্তর ত্রিপুরায় প্রবেশ করে৷ গোপন সূত্রের ভিত্তিতে তাদের ধরতে খোদ উত্তর ত্রিপুরার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা সাদা পোশাকে অবস্থান নিয়ে ওত পেতে বসেছিলেন৷ দুই মাদক পাচারকারী বাইক নিয়ে ত্রিপুরার কদমতলা থানাধীন ফুলবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতেই ত্রিপুরা পুলিশ তাদের পিছু ধাওয়া করে আটক করে৷
ধৃতদের তালাশি চালিয়ে তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার হয় চারটি প্যাকেটে মোট ৫২ গ্রাম ব্রাউন সুগার৷ উদ্ধারকৃত ব্রাউন সুগারগুলোর বাজারমুল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবে বলে জানিয়েছেন জনৈক নারকোটিক আধিকারিক৷ তবে উত্তর ত্রিপুরার পুলিশ সুপারের বক্তব্য, উদ্ধারকৃত ব্রাউন সুগারগুলির বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা৷ ধৃতদের বিরুদ্ধে চোরাইবাড়ি থানায় নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবসট্যান্সেস অ্যাক্ট, ১৯৮৫ (এনডিপিএস) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে৷
ধৃতদের শুক্রবার ধর্মনগরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী৷ সেই সঙ্গে উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যগুলো পরীক্ষার জন্য আগরতলায় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি৷
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা প্রশাসন নেশা কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে একের পর এক সাফল্য পেলেও এ-ক্ষেত্রে অসম পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বিশেষ করে, বরাক উপত্যকার কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় নেশা জাতীয় সামগ্রীর রমরমা কারবার চললেও এ-সবে লাগাম টানতে পারছে না অসমের পুলিশ প্রশাসন৷
এ-ব্যাপারে করিমগঞ্জ জেলায় ড্রাগস-এর বিরুদ্ধে ব্যরবস্থা নিতে জেলাশাসক এমএস মণিভন্নন এবং পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায়ের কাছে গত ২ জুলাই পৃথক পৃথক স্মারকপত্রের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছিল করিমগঞ্জ জেলা ভারতীয় যুবমোর্চা৷ স্মারকপত্রে তাঁরা লিখেছেন, অবৈধ ড্রাগসের কবলে পড়ে যুব সমাজ তিলে তিলে ধবংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ আর এই ড্রাগসের কারণে সমগ্র জেলাজুড়ে ইদানীং বিভিন্ন অসামাজিক কার্ষকলাপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণ ড্রাগসের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ড্রাগস বিক্রেতা ও সেবনকারীদের পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও, এখনও অধরা রয়ে গেছে ড্রাগস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালরা৷ মারণ নেশাদ্রব্যের কবল থেকে জেলাবাসী, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুব সমাজকে উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা৷
জেলার ড্রাগস কারবারিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যরবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে পৃথক দুটি স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলার জনগণ ড্রাগস কারবারি-সহ সেবনকারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযান জারি রেখেছেন, তা সার্থক করে তুলতে জেলা পুলিশ প্রশাসন এবং সাধারণ প্রশাসনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ প্রশাসনের মদত ছাড়া জেলাকে নেশামুক্ত করা সম্ভব নয়৷ জেলায় ড্রাগস ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালদের শনাক্ত করে এদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যকবস্থা নিয়ে, নেশামুক্ত সমাজ গঠনে সদর্থক ভূমিকা পালনের জন্য প্রশাসনের কাছে স্মারকপত্রের মাধ্যমে আবেদন জানায় জেলা যুবমোর্চা৷