নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জুলাই৷৷ রাজ্যে শিক্ষার হাল নিয়ে বিগত সরকারগুলির ভূমিকায় চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর দাবি, রাজ্যে শিক্ষার গুণগতমানের অভাব রয়েছে৷ তাই, এ যাবৎ রাজ্য থেকে কেবলমাত্র ৩ জন সরাসরি আইএএস হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন৷ যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ বৃহস্পতিবার সুুকান্ত একাডেমীর সভাগৃহে ত্রিপুরা রাজ্য মহাবিদ্যালয় শৈক্ষিক সংঘের সাধারণ সভার উদ্বোধন করে একথা বলেন তিনি৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রধর্মই প্রধান৷ কিন্তু ৬০-৬৫ বছরের জঞ্জাল পাঁচ বছরে সরানো সম্ভব নয়৷ কিন্তু, সরকার গঠনমূলক ভাবনা নিয়ে সেই দিশাতে কাজ শুরু করে দিয়েছে, বলেন তিনি৷ প্রসঙ্গক্রমে তিনি দাবি করেন, চানক্য শিক্ষকদের আদর্শ হওয়া উচিত৷ তাঁর কথায়, আমাদের দেশে ১৯৯৮ সালের পর থেকে সঠিকভাবে রাষ্ট্রহিতে কাজ করা শুরু হয়েছিল৷ রাষ্ট্রহিত ভাবধারায় জারিত মনীষীদের হাতে এই দেশ শাসনের ভার কম সময়ের জন্য ছিল৷ তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যারা ভারতীয় ব্যবস্থাকে মানেনা, তারাই এই দেশ চালাতেন৷ যখন শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়ত্ব অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সচেষ্ট হয়েছিল তখনই সরকারের উপর আঙুল উঠেছে৷ ধর্ম নিরপক্ষেতা শব্দটিকে বারবার অনৈতিকভাবে হাতিয়ার করে তোলা হয়েছিল৷
মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরও বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তাধারা পরিবর্তিত হচ্ছে৷ নতুন ভারত গড়ার জন্য পরিবর্তন হচ্ছে৷ সমগ্র বিশ্বে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে৷ তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল৷ ইউ জি সি অনুমোদিত কলেজগুলো এতে উপকৃত হত৷ কিন্তু বিগত সরকার এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি৷ কিন্তু, বর্তমান সরকার শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে৷ তাঁর দাবি, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকলস্তরের শিক্ষার উন্নয়নে রাজ্য সরকার সমভাবে সচেষ্ট৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জনসংখ্যার নিরিখে দেশে ত্রিপুরা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে৷ এখানে ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাতও সবচেয়ে বেশি৷ সে তুলনায় রাজ্যের শিক্ষার গুণগতমানের অভাব রয়েছে৷ যার দরুণ এ যাবৎ রাজ্য থেকে কেবলমাত্র ৩ জন সরাসরি আই এ এস হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন৷ যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ তিনি বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি পর্যায় থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, আচার-আচরণ শিক্ষন শুরু করতে হয়৷ তখনই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গুণগত শিক্ষার বিকাশ ঘটবে৷ বর্তমান রাজ্য সরকার সেই দিশাতেই কাজ করছে৷
নিজের কর্মের প্রতি সমর্পিত মনোভাবের উদাহরণ দিতে গিয়ে এদিন তিনি দিব্যাঙ্গ ছাত্র প্রলয় সূত্রধর ও তার মার কথাও নিজের বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করেন৷ বক্তব্যের শেষের পর্যায়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যে এমন সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করতে চায়, যেখানে কোন আসামী ও সংশোধনাগার থাকবে না৷ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত ৩৫৮ কোটি টাকা রাজ্যের অসমাপ্ত বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজা রামমোহন রায়, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনায় যে জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ মুক্ত ভারতবর্ষ ছিল, সেরকম ভারতবর্ষ গঠনে বর্তমানে সরকার সচেষ্ট৷ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাচীন এই ঐতিহ্য রয়েছে৷ এদিন এই অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের আর্গানাইজিং সেক্রেটারি মহেন্দ্র কাপুর, ত্রিপুরা রাজ্য মহাবিদ্যালয় শৈক্ষিক সংঘের সভাপতি ড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও সাধারণ সচিব তীর্থরাম রিয়াং এবং ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ অধিকর্তা ড. অরবিন্দ মাহাতো প্রমুখ৷ এই অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত অতিথিবর্গ ভারতমাতা ও সরস্বতী দেবীর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্যও নিবেদন করেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মহেন্দ্র কাপুর বলেন, কেবলমাত্র সরকার দেশ চালাতে পারে না৷ প্রত্যেক দেশবাসীকে নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে হবে৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিরাও এদিন বক্তব্য রাখেন৷ এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা অংশ্রগ্রহণ করেছিলেন৷