ঢাকা, ৩ জুলাই (হি.স.): ২৫ বছর আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনবহরে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা হল বুধবার । ওই ঘটনায় ৯ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই মামলায় ২৫ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এ ছাড়া ১৩ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রোস্তম আলী আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার ৫২ আসামির মধ্যে জীবিত আছেন ৪৭ জন। রায় ঘোষণার সময় এদের মধ্যে ৩৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা সবাই ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির প্রাক্তন সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু, পাবনা জেলা বিএনপি’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম আকতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের ঈশ্বরদী পৌর কমিটির সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, শামছুল আলম, মুজিবুর রহমান, শহীদুল ইসলাম অটল ও শামছুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন ও সরকারি কৌঁশুলি আক্তারুজ্জামান মুক্তা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সনৎ কুমার সরকার ও অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে তাকে বহনকারী ট্রেনবহর যাত্রাবিরতি করলে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী আক্তারুজ্জামান মুক্তা বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে আওয়ামি লিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ওই ট্রেনে ও তার কামরায় গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় ওই সময়ে জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নামে মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ মামলাটি পুনর্তদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুন করে ঈশ্বরদী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে মামলায় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনও সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু আদালত ওই রিপোর্ট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করে। পরে সিআইডি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এ বছরের ৩০ জুন বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মী আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। মঙ্গলবার ২ জুলাই মামলার আরও দুই আসামি ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র ও পৌর বিএনপির প্রাক্তন সভাপতি মোখলেছুর রহমান ওরফে বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ এ দিন রাতেই মামলার আরেক আসামিকে গ্রেফতার করে।