রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা প্রশ্ণের মুখে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ খোয়াই/ তেলিয়ামুড়া/ উদয়পুর, ২৮ জুন৷৷ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ গত চবিবশ ঘন্টায় তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ যদিও তিনজনকেই পরিকল্পিত খুন বলে দাবি করা হচ্ছে৷ এই তিনটি ঘটনায় মাত্র একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ একই সাথে নারী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনাও ঘটছে৷ পাল্লা দিয়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটছে৷


রাজধানী আগরতলা শহেরর পূর্ব থানার অধীন মহারাজগঞ্জ বাজার এলাকায় লালমাটিয়াতে একটি বিপনী বিতানের ফাঁকা স্টলে এক যুবককে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের নাম শিবু দেব৷ তাঁর বয়স আটত্রিশ বছর৷ বাড়ি চান্দিনামুড়া এলাকায়৷ বৃহস্পতিবার রাতে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জি বি হাসপাতালে৷ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ পুলিশ একটি মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান ওই ফাঁকা স্টলে শিবু সহ আরও কয়েকজন মিলে মদের আসর বসায়৷ সেখানে কোনও একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতন্ডা হয়৷ তারপরই শিবু দেবকে খুন করা হয়েছে৷


জানা গিয়েছে, ওই বিপনী বিতানের সিংহভাগ স্টল খালি পড়ে রয়েছে বাম জমানা থেকেই৷ মূলতঃ শহরের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে হকার ব্যবসায়ীদের পুণর্বাসনের জন্য এই মার্কেট খোলা হয়েছিল৷ কিন্তু, হকাররা ওই বিপনী বিতানে যেতে রাজী হচ্চেন না৷ তাই সিংহভাগ স্টল খালি পড়ে রয়েছে৷ আর এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে মদ ও জুয়ার আসর৷ মাফিয়াদের আড্ডার স্থল৷ সেখানে বসেই মাফিয়ারা তাদের লেনদেনের কাজটি সম্পাদন করে৷ মূলতঃ সমাজদ্রোহীদের মৃগয়াক্ষেত্র হচ্ছে এই লালমাটিয়ার বিপনী বিতান৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সমাজদ্রোহীদের সাথে যোগসাজস ছিল নিহত শিবু দেবের৷ লেনদেন নিয়ে বিবাদের জেরেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে৷


এদিকে, খোয়াইয়ের লালছড়ায় এক যুবককে খুন করা হয়েছে প্রণয়ের সূত্র ধরে৷ এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তিনজনের বিরুদ্ধে৷ তিনজনের মধ্যে দুজন মহিলাও রয়েছে৷ নিহত যুবকের বাবা মন্টু ঘোষ, শেফালী ঘোষ এবং পায়েল সরকার নামে তিনজনের বিরুদ্ধে খোয়াই থানায় এফআইআর করেছেন৷


সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, খোয়াই থানাধীন এলাকায় ড্রেন থেকে মিলল এক যুবকের মৃতদেহ৷ ঘটনা বৃহস্পতিবার রাতে৷ খোয়াই বিপিসি পাড়াস্থিত মামার বাড়ী থেকে সিঙ্গিছড়া ভাগ্যটিলা৷ এলাকায় নিজ বাড়ীতে ফিরবে বলে রওয়ানা হয়েও সে আর বাড়ী ফিরেনি৷ মাঝপথে লালছড়া বাঘাযতীন ক্লাব সংলগ্ণ এলাকার ড্রেনে মিলল ২১ বছর বয়সী অরূপ দেবের মৃতদেহ৷ সে একসময় বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে কাজ করেছে৷ তবে, অরূপের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে৷ খুন নাকি অন্যকোন কারণে অরূপের মৃত্যু হয়েছে তা এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই স্পষ্ট করে বলা যাবে৷ এমনটাই জানালো পুলিশ৷ তবে, পুত্রহারা পিতা অমর দেব জানিয়েছে, পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে৷ থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি৷ যদি সুষ্ঠু তদন্দ হয় তবে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ্যে আসবে৷ যদিও লালছড়া এলাকায় অরূপের সাথে এক যুবতীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল বলেও জনমনে গুঞ্জন রয়েছে৷ তবে, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে অরূপকে তার মামার বাড়ী থেকে তারই একজন বন্ধু এসে ডেকে নিয়ে আসে৷ আর এরপর থেকেই অরূপের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না৷ এখন অরূপের সেই বন্ধুকে জেরা করেই তদন্তে এগুবে পুলিশ৷


এদিকে, তেলিয়ামুড়া থানার অধীন বাইশঘরিয়া এলাকায় সিরাজ মিয়া (২২) নামে এক যুবককে বারো চাকার লরি পিষে মেরেছে৷ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে৷ পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে এএস-০১-সিসি-১৯৫৮ নম্বরের একটি বারো চাকার লরি ওই যুবককে পিষে মারে৷ লরিটি ওই যুবককে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় চম্পকনগরের দিকে৷ সাথে সাথেই তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ বিষয়টি চম্পকনগর থানার পুলিশকে জানায়৷ চম্পকনগর থানার পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে এবং চালককে গ্রেপ্তার করেছে৷


এদিকে, উদয়পুর মহিলা থানার গাফিলতিতে মা ও দুই বোনের অস্তিত্ব সঙ্কট৷ ঘটনা আর কে পুর মহিলা থানার অধীন ভাঙ্গাড় পাড় – সোনামুড়া এলাকায়৷ গত ৮অক্টোবর ২০১৮ ইং উদয়পুর ভাঙ্গাড় পাড় – সোনামুড়া এলাকার গৌরাঙ্গ শুক্ল দাস ও কানন বালা শুক্ল দাসের মেয়ে শিখা শুক্ল দাস কাজ যাবে বলে বাড়ি থেকে দুই মেয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়৷ এই মর্মে আর কে পুর মহিলা থানায় কানন বালা দাস একটি মিসিং ডাইরি করেন৷ আর কে পুর মহিলা থানার পুলিশ রাজ্যের সব থানায় মিসিং মেসেজ পাঠিয়ে দায়িত্ব খালাস করে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে৷ কানন বালা দাস বিভিন্ন দরজায় দরজায় ঘুরে মেয়ে ও দুই নাতনি দেবশ্রী ও অঙ্কিতা শুক্ল দাসের কোন খোঁজ না পেয়ে সংবাদ প্রতিনিধির নিকট যাবতীয় কাগজ পত্র প্রমান স্বরূপ দিয়ে গেলে সংবাদ প্রতিনিধিরা মহিলা থানায় খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ নড়ে চড়ে বসে৷প্রায় নয় মাস পড়ে মহিলা থানার পুলিশ এক সপ্তাহ সময় চেয়ে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদে না জানানোর কথা বলেন৷ এখানে উল্লেখ থাকে যে বড় নাতনি দেবশ্রী শুক্ল দাস উদয়পুর রমেশ সুকলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো৷এবছর অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত থাকতো৷ ছোট নাতনি অঙ্কিতা শুক্ল দাস উদয়পুর পাঠভবন সুকলে নার্সারি বিভাগের ছাত্রী ছিলো৷ সঠিক সময়ে উদয়পুর মহিলা থানায় জানানো স্বত্যেও মহিলা থানার পুলিশ ভূমিকা না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে৷

সংবাদের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সংবাদ প্রতিনিধি আরো জানতে পারেন শিখা শুক্ল দাস প্রতি মাসে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের উদয়পুর শাখা থেকে কন্যা সন্তান যোজনার টাকা তুলে নিয়ে যান৷ কিন্তু পুলিশ একটু নড়েচড়ে বসলেই নয় মাস আগেই শিখা ,দেবশ্রী ও অঙ্কিতা কে উদ্ধার করতে পারতেন৷ আজকে ও কালকে মহিলা থানার যে তৎপরতা দেখা গেছে এই তৎপরতা নয় মাস আগে দেখালে কচিকাঁকলি দেবশ্রী ও অঙ্কিতার জীবনে অমানিশার কালো অন্ধকার ঘনিয়ে আসতো না৷ দিদা কানন বালার একটাই দাবি যেভাবেই হউক আমার নাতনিদের ফেরৎ এনে পূর্বের ন্যায় উদয়পুর রমেশ সুকল ও পাঠভবনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হউক৷ মহিলা থানার ভূমিকা নিয়ে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন সুনাগরিকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *