BRAKING NEWS

সুতারকান্দির জমি কেলেঙ্কারি : ১০টি মামলার বোঝা নিয়ে কারাগারে গেলেন প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট

করিমগঞ্জ (অসম), ২৮ জুন (হি.স.) : সুতারকান্দির বহু কোটি টাকার জমি কেলেংকারির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত রাজ্যেরর এক এসিএস অফিসার, প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেটের ঠাই হয়েছে করিমগঞ্জ জেলা করাগারে। দশটি মামলার কলঙ্কের বোঝা নিয়ে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে যেতে হয়েছে করিমগঞ্জের প্রাক্তন তথা বর্তমানে দেড়গাঁওয়ের রজস্ব চক্র আধিকারিক হোমেন গোঁহাই বরুয়াকে। দু দফায় প্রায় পাঁচদিন তিনি পুলিশ রিমান্ডে থাকার পর শুক্রবার করিমগঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদ আহমেদের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে হোমেন গোঁহাই বরুয়ার পক্ষে দাখিলকৃত প্রায় আটটি মামলার জমিন আবেদনও আজ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

সুতারকান্দিতে সংঘটিত বহু কোটি টাকার জমি কেলেঙ্কারি মামলায় এখন পর্যন্ত মোট তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জেলে পুরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তিন অভিযুক্তের মধ্যে করিমগঞ্জের তদানীন্তন প্রাক্তন সার্কল অফিসার হোমেন গোঁহাই বরুয়া ছাড়া অন্য দুজন হলেন সদর সার্কল অফিসের কানুনগো মিহিররঞ্জন মালাকার এবং আমিন প্রাণজিৎ নাথ। মিহির ও প্রাণজিতকে আগেই পুলিশ রিমান্ড শেষ করে আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই চাঞ্চল্যকর মামলায় করিমগঞ্জের একাংশ তৎকালীন সরকারি পদস্থ অফিসার ও বহু রাঘববোয়াল পুলিশের তদন্তের আওতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। 

পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. দেবজিত নাথ জানান, মামলাগুলোর তদন্তের স্বার্থে সার্কল অফিসার হোমেন গোঁহাই বরুয়াকে প্রয়োজনবোধে পুনরায় পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে আসবে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, করিমগঞ্জ সদর রেভিনিউ সার্কলের তদানীন্তন এবং বর্তমানে গোলাঘাট জেলার দেড়গাঁও-এর চক্র আধিকারিক হোমেন গোঁহাই বরুয়ার একসময়ের ঘনিষ্ঠ সতীর্থ তথা বিশ্বস্ত এবং একই সার্কলের আমিন প্রাণজিৎ নাথ এবং কানুনগো মিহিররঞ্জন মালাকার এক সঙ্গে এবার করিমগঞ্জ জেলের বাসিন্দা।

সুতারকান্দির কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদ চৌধুরী রচিত ফাঁদে পা দিয়ে এখন তাদের মাথা চাপড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে দেড়গাও-এ কর্তব্যরত এসিএস অফিসার হোমেন গোহাঁই বরুয়াকে গত সোমবার করিমগঞ্জের সদর পুলিশ থানায় ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করে তিন দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছিল। বুধবার তিন দিবসীয় রিমান্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর মামলার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা তাঁকে আদালতে পেশ করে জমি কেলেঙ্কারি সম্পর্কিত অপর মামলায় ফের তাকে গ্রেফতার করে আরও দুদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। 

বুধবার আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে একে একে প্রায় ১০টি মামলায় সার্কল অফিসার গোহাঁইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারক ওইদিন আরও দু দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। দু দফায় টানা পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে পুলিশ তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে। তবে পুলিশের সঙ্গে হোমেন গোঁহাই কোনও সহযোগিতা করেননি বলে জানা গিয়েছে।

করিমগঞ্জের প্রাক্তন সার্কল অফিসার হোমেন গোঁহাই বরুয়াকে মূলত পিএস কেস ৭৬২/২০১৮ নম্বরের মামলায় দেড়গাঁও থেকে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হলেও, বর্তমানে ওই জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যে দশটি মামলায় পুলিশ তাঁকে শোর্ন এরেস্ট করেছে, সে-সব মামলার নম্বর যথাক্রমে পিএস কেস ৭৩৯/২০১৮, ৮৪৭/২০১৮, ৭৬৩/২০১৮, ৭০০/২০১৮, ৭৩৪/২০১৮, ৬৯৯/২০১৮, ১১৪০/২০১৮, ১১৩৭/২০১৮, ৮৪৮/২০১৮ এবং ১১৩২/২০১৮। সবকটি মামলায় ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০ (বি)/৪২০/৪৬৮/৪০৬/৪৭১/৩৪-সহ আরও বেশ কয়েকটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদের রচিত ফাঁদে পা দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদের মধ্যে্ আজ ত্রাহিত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, জেলাশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মী ইতিমধ্যে সদর থানায় তলব করা হয়েছে। তবে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা তদন্তে কতটুকু সহযোগিতা করেছেন তা জানা যায়নি। 

প্রসঙ্গত, এই জমি কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদ চৌধুরী। আন্তর্জাতিক বন্দরের নামে কেন্দ্রীয় সরকার ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কথা ছিল, চলতি মাসে করিমগঞ্জ এসে বন্দরের সূচনা করবেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু বন্দর তো দূর, উল্টে বন্দরের নামে জমি কেলেঙ্কারি করে পুরো টাকাই গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। অন্যের জমি নিজের নামে দেখিয়ে এই কেলেঙ্কারি করেছে বিতর্কিত আহাদ চৌধুরী। তার প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সদর সার্কলের কর্মী ও আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *