নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জুন ৷৷ দরিদ্র কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা আন্তরিক তার উদাহরণ তুলে ধরেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর কথায়, দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষণ ছাড়া অতিরিক্ত ২৫টি এমবিবিএস আসনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় শান্তিরবারস্থিত জেলা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ফেসিলিটি সেন্টারের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে এ-কথা বলেন তিনি৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সব এলাকায় জনগণ যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবার সমান সুুযোগ পান সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ শুরু করেছে৷ বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা সহ মহকুমা, জেলা সদরেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকার দৃষ্টি দিয়েছে৷
তাঁর কথায়, ট্রমা কেয়ার ফেসিলিটি একটি ন্যাশনাল প্রজেক্ট৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ৯০ শতাংশ এবং রাজ্য সরকারের ১০ শতাংশ অংশীদারিত্বে জাতীয় সড়কের পাশে এই সেন্টার করা হয়৷ তিনি বলেন, দেশের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এই প্রকল্প চালু করেছিলেন৷ মূল উদ্দেশ্য ছিলো, জাতীয় সড়কে কোনও দুর্ঘটনা হলে যাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সহসাই সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে সুুস্থ করে তোলা যায়৷ তিনি বলেন, দেশে উন্নত জাতীয় সড়ক ব্যবস্থা চালু করে ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার৷ পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে এই কাজে আরও গতি আসে৷
তাঁর কথায়, রাজ্যে দীর্ঘদিন ১টি মাত্র জাতীয় সড়কের কারণে জনগণের ব্যাপক অসুুবিধা হতো৷ বিশেষ করে বর্ষাকালে জাতীয় সড়কে ধস পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকতো৷ এর প্রভাব রাজ্যের জনগণের উপর পড়তো৷ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার আসার পর জাতীয় সড়কের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে আগরতলা থেকে সাব্রুম জাতীয় সড়ককে প্রশস্ত ও উন্নত করা হয়েছে এবং এই কাজ খুব অল্প সময়ে সম্পন্ন করা গেছে৷ তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার খোয়াই, কুমারঘাট, চুড়াইবাড়ি হয়ে বিকল্প জাতীয় সড়কের অনুমোদন দিয়েছে৷ এই কাজ আরও আগেই করা উচিত ছিলো৷ কিন্তু তৎকালীন রাজ্য সরকারের রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতি আগ্রহ ছিলো না৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সড়কে গাড়ি চালানোর সময় রাজ্যের জনগণকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান৷ অভিভাবকদেরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার সংরক্ষণ ছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের দরিদ্র জনগণের জন্য জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ২৫টি এমবিবিএস কোর্সের আসন অতিরিক্ত বরাদ্দ করেছেন৷ তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এখন দরিদ্র অংশের ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারি পড়তে পারবে৷ মুখ্যমন্ত্রী এই ট্রমা কেয়ার ফেসিলিটি সেন্টারটি নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার আগেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য পূর্ত দপ্তরকে নির্দেশ দেন৷ সময়ের কাজ সময়ে শেষ করলে সরকারি খরচ সাশ্রয় হয়৷ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার সময়ের কাজ সময়ে শেষ করে দেশের জনগণের জন্য বহু জনকল্যাণমুখী প্রকল্প নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে চালু করে দেখিয়েছেন৷ বর্তমান রাজ্য সরকারও সেই দিশাতেই কাজ করছে৷
তিনি বলেন, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে রাজ্য সরকারের যে লক্ষ্য রয়েছে তা হলো তিন বছরের মধ্যে রাজ্যকে মডেল স্টেটে রূপান্তরিত করা৷ তারজন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী খবই আন্তরিক৷ রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর খব অল্প সময়ের মধ্যে রাজস্ব সংগ্রহ ৯.৮ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ এটা সম্ভব হয়েছে রাজ্যের জনগণ, বিধায়ক ও মন্ত্রীদের প্রচেষ্টার ফলে৷ ত্রিপুরা ধীরে ধীরে মডেল স্টেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ গোমতী নদীতে ছোট জলবন্দর চালু করা হবে৷ ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে গোমতী নদীতে ড্রেজিং করে অস্থায়ীভাবে বন্দর চালু করা হবে খব শীঘই৷ পাশাপাশি স্থায়ীভাবে বন্দর নির্মাণের কাজ চলতে থাকবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার রাজ্যের সাঁইত্রিশ লক্ষ জনগণের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ এই সরকার সবকা সাথ সবকা বিকাশ ও সবকা বিশ্বাস এই নীতিতে বিশ্বাস করে৷ বিশ্বাস থাকলে জীবনে কি করা যায় তা করে দেখিয়েছেন উদয়পুরের প্রলয় বিশ্বাস৷ দিব্যাঙ্গ হয়েও পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিকে সাফল্য পেয়েছে৷ তারমধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস জাগিয়েছে তার মা৷ রাজ্যের সরকার জনগণের সকল আশা-বিশ্বাস পূরণে সঠিক দিশা নিয়ে কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এবং মডেল স্টেট তৈরিতে রাজ্যের সকল স্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছেন৷

