ঢাকা ১৫ জুন (হি.স.) : সীমান্তে হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়াকে অনাকাঙ্খিত বলেছেন ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) রজনীকান্ত মিশ্র। চারদিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে আজ শনিবার সকালে পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরে উভয় দেশের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএসএফ ডিজি এ কথা বলেন। তবে ‘হত্যাকান্ড’ শব্দের সঙ্গে তিনি একমত নন। মিশ্রর বক্তব্য, সীমান্তে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু হচ্ছে। যখন কোনও বিকল্প থাকে না, প্রাণ বাঁচাতে বিএসএফ প্রতিহত করে শুধু। মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সব কটি ঘটনাই ভারতীয় ভূমিতে ঘটেছে, আর তাতে বিএসএফ সদস্যরাও প্রাণ হারিয়েছেন।

গত বুধবার থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। পিলখানার এ বৈঠক বিজিবি-বিএসএফের মধ্যকার ৪৮তম সম্মেলন। এতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
বিএসএফ ডিজি রজনীকান্ত মিশ্র বলেন, হত্যার ঘটনা কেন বেড়ে গেছে-তা আমরা খতিয়ে দেখছি। সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমাদের বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষের জীবন তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাঁদের। বিএসএফকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুর্বৃত্তরা বিএসএফের ওপর পাথর ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে, কখনো কখনো দা দিয়ে হামলা করেছে। কোনো বিকল্প না থাকায় প্রাণে বাঁচতে খুব অল্প কিছু ঘটনায় বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
রজনীকান্ত সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বছর ভারতীয় ভূমিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, ছয়জন ভারতীয়। একজন জওয়ান মারা গেছেন, ৩৯ জন আহত হয়েছেন। এ বছরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা প্রতিটি ঘটনায় নিয়মমাফিক থানায় মামলা করেছেন এবং তদন্ত করেছেন। ভারতীয় ভূমিতে দুর্বৃত্তদের সহযোগীদের গ্রেফতার করেছেন। তাঁরা বিজিবি ও বিএসএফকে সীমান্তের যেসব জায়গা দুর্বল, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন। নতুন করে আবারও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ এ ধরনের সব ঘাঁটি নির্মূল করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে এবং এতে তারা সন্তুষ্ট।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, ২০১০ সালে সীমান্তে ফেলানী নামে এক কিশোরী হত্যার ঘটনায় ৫ বিএসএফ সদস্য কোর্টের বিচারাধীন রয়েছেন (আন্ডার কোর্ট ট্রায়াল)। ভারত থেকে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, ইয়াবা আসছে তৃতীয় একটি দেশ থেকে। তবে এর মধ্যে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ দুই বাংলাদেশি নারী প্রবেশ করেছিল। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। ভারতে অবস্থান করে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)র সদস্যরা বাংলাদেশে হামলা করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রজনীকান্ত বলেন, সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীদের অবৈধ পারাপার বন্ধ করার জন্য দুই দেশ কাজ করছে।
বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে দুই দেশের বাহিনী কাজ করছে।
প্রেস ব্রিফিং-এর শুরুতে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, কিছু বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। দুই পক্ষ মাদকদ্রব্য চোরাচালান, অস্ত্র ও সোনা চোরাচালান এবং নকল টাকা রোধ নিয়ে আলোচনা করেছে। দুই বাহিনীর কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করে, সে ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে।
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করতে বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল র্যা লি নিয়ে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

