নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ জুন ৷৷ গোমতি জেলায় কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে৷ সাত দিন ধরে শিবিরে কৃষকরা ধান বিক্রি করবেন৷ পাশাপাশি ২০২২ সালের মধ্যে গোমতি জেলার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর কর্মশালা ও সচেতনতা শিবির আজ উদয়পুর রাজর্ষি কলাক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ উভয় শিবিরের উদ্বোধন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী প্রাণজিৎ সিংহরায়৷
আজ কৃষিমন্ত্রী সিংহরায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে৷ আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাজ্য সরকার কাজ করে চলেছে৷ তার কথায়, সারা রাজ্যে ২১,৫০০ হেক্টর জমিকে হাই রিস্ক জোন হিসেবে চিহিণত করা হয়েছে৷ এই চিহিণত এলাকায় যে সকল কৃষক চাষাবাদ করবেন, সরকার তাদের বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বিমা করে দেবেন৷ এর জন্য ব্যয় হবে ৩ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা৷ তিনি বলেন, এ-বছর এখন পর্যন্ত গোমতি জেলায় ৫০৪ জন কৃষককে প্রধানমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে গোমতী জেলায় ২৪,০০০ কৃষককে প্রথম কিস্তি হিসেবে ২,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১৯,০০০ কৃষককে৷
তাঁর দাবি, গোমতী জেলায় ১০ জন করে মোট ৩৭টি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে৷ প্রত্যেক গ্রুপকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে গ্রুপের সদস্যদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য৷ তার আরও দাবি, গত অর্থবর্ষে গোমতী জেলায় ৮৩৬টি পাওয়ারটিলার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে৷ পাম্পসেট দেওয়া হয়েছে ৪০০টি৷ সবকিছু মিলিয়ে ৪৮২২টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে৷
কৃষিমন্ত্রী আজ বলেন, গত বছর কৃষকদের কাছ থেকে ১০,৪০০ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হয়েছে৷ এ বছরও রবি মরশুমে ১০,০০০ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এই ধানগুলি মিলিং করে রেশনের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষকে দেওয়া হবে৷ তার দাবি, প্রতি কুইন্টাল ধান ১,৭৫০ টাকা করে কেনা হবে৷ তার কথায়, রাজ্যে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়৷ কিন্তু প্রয়োজন ৯ লক্ষ মেট্রিকটনেরও বেশি৷ ঘাটতি ধান উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সকল রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি৷ তাছাড়া ধান মারাইর মেশিনও কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷
এদিকে, বিধায়ক বুর্বমোহন ত্রিপুরা সমস্ত কৃষকদের আন্তরিকতার সঙ্গে কৃষিকাজ করার জন্য অনুরোধ করেন এবং সবরকম সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন৷ বিধায়ক বিপ্লবকুমার ঘোষ বলেন, কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর৷ কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলে রাজ্যেরই উন্নতি হবে৷এদিন গোমতী জেলার জেলাশাসক ড় টি কে দেবনাথ সমস্ত কৃষককে সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷
আজ সেমিনারে গোমতি জেলার বিভিন্ন মহকুমা থেকে প্রায় এক হাজারেরও অধিক কৃষক অংশ নেন৷ অতিথিরা কৃষকদের হাতে সয়েল হেলথ কার্ড তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী পদ্মমোহন জমাতিয়া৷
এদিকে, আজ সকালে মাতাবাড়িস্থিত ধন্যমাণিক্য মুক্তমঞ্চে গোমতী জেলার কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার শিবিরেরও উদ্বোধন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়৷ এই ধান ক্রয় শিবির চলবে আগামী সাতদিন পর্যন্ত৷ অমরপুর, কাকড়াবন, মির্জা, তেপানীয়া, মহারাণী-তেও ধান ক্রয় শিবির করা হবে৷ এই অনুষ্ঠানে বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, গোমতীর জেলাশাসক ড় টি কে দেবনাথ, বিধায়ক সুুধাংশু দাস সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবী পদ্মমোহন জমাতিয়া৷