নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জুন৷৷ সন্ত্রাস এবং ষড়যন্ত্র ইস্যুতে আজ বিপ্লব কুমার দেব বিরোধীদের তুলোধুনো করেছেন৷ বিপ্লবের কথায়, রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে সন্ত্রাসের রাজনীতির পরম্পরা ছিল৷ কিন্তু, এখন সন্ত্রাসের রাজনীতির অবসান করতে চাইছি৷ তাঁর সাফ কথা, বিজেপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়৷
শুক্রবার বিজেপি প্রদেশ সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, নরেন্দ্র মোদির সব-কা সাথ সব-কা বিকাশ মন্ত্রে দীক্ষিত বলেই, ত্রিপুরায় ইতিহাস রচনা করা গিয়েছে৷ আর ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসানের প্রতিফলন পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরাবাসী এবং গোটা দেশবাসী বিজেপির প্রতি আস্থার পরিচয় দিয়েছেন৷
এদিকে, আজ আবারও বিপ্লব দেব রাজ্যে সরকার পরিবর্তনে সমস্ত কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদিকে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদির সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই ২০১৮ সালের ৩ মার্চ ত্রিপুরায় ইতিহাস রচনা হয়েছে৷ ঠিক একইভাবে, নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরায় যে ক্যারিশ্মা দেখিয়েছেন তা পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও প্রতিফলিত হয়েছে৷ সেখানেও বিজেপির উত্থান প্রচন্ডভাবে শুরু হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সরকারকে দিয়ে উন্নয়নের মাপকাঠি তৈরি হয় না৷ নির্ণায়ক হলেন পৃষ্ঠাপ্রমুখরাই৷ তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি৷ লোকসভা নির্বাচনে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ শতাংশ৷ নির্বাচনে ফলাফল ভাল হলেও পরিস্থিতি নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন, তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর দাবি, রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে সন্ত্রাসের রাজনীতির পরম্পরা ছিল৷ কিন্তু, এখন সন্ত্রাসের ভর করে রাজনীতির অবসান করতে চাইছি৷ তাঁর সাফ কথা, বিজেপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়৷ তাই তিনি সেই পথে না যাওয়ার জন্য দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান৷ তাঁর মতে, সন্ত্রাসের রাজনীতির বদলে বিকাশ নীতিই সাফল্যের চাবিকাঠি৷
তাঁর কথায়, লোকসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরায় যে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল রাজ্যবাসী তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন৷ মডেল ত্রিপুরা, শান্তির ত্রিপুরা চাইছেন রাজ্যবাসী, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ তবে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে যারা ভোট দেননি ত্রিস্তর নির্বাচনে তাঁদের কাছে পৌছাতে হবে, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন বিপ্লব দেব৷ তাঁর বক্তব্য, ওই ভোটারদের বোঝাতে হবে উন্নয়ন শুধুই নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই সম্ভব৷ তবেই, রাজ্যে নতুন ইতিহাস রচনা হবে, আশা প্রকাশ করে বলেন বিপ্লব দেব৷
মুখ্যমন্ত্রী আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি সরকারের জমানায় কোন সুপারিশের স্থান নেই৷ যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সরকার সবরকম সহায়তা দেবে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর দেড় বছরে ৭.১ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে৷ তাই তিনি মনে করেন, শ্রেষ্ট ত্রিপুরা গড়ার দীশায় এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার৷ বিপ্লবের দাবি, নরেন্দ্র মোদির সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ সাথে সব-কা বিশ্বাস মন্ত্রে সুবিধা সরাসরি সুবিধাভোগীর কাছে পৌছায়৷ তাই, দেশবাসী বিজেপি-র প্রতি আবারও আস্থা রেখেছেন৷
এদিকে, নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প খুঁজে পাননি দেশবাসী ৷ তাই বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি-র প্রত্যাবর্তন হয়েছে ৷ শুক্রবার আগরতলায় বিজেপি প্রদেশ কমিটি আয়োজিত অভিনন্দন সমাবেশে এভাবেই নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব ৷ তাঁর কথায়, সাধারণত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ায় শাসকদলের ভোটের হার কমে যায় ৷ কিন্তু, সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি-র ভোটের হার বেড়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লির মসনদ দখল হয়েছে ৷ তাঁর দাবি, দেশবাসী যোগ্য ব্যক্তির হাতেই পুনরায় দেশের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন ৷ কারণ, দেশবাসী বিশ্বাস করেন, নরেন্দ্র মোদী ভারতকে বিশ্বগুরুর অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন ৷
আজ অভিনন্দন সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে রাম মাধব প্রথমেই ত্রিপুরাবাসীকে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আরও একবার আস্থা রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি ৷ রাম মাধব বলেন, ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যবাসী যে ইতিহাস রচনা করেছিলেন লোকসভা নির্বাচনে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন৷ তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা থেকে এই প্রথম দুই সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক ঘটনা ৷
রাম মাধবের কথায়, ত্রিপুরা গোটা দেশের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে৷ কিন্তু বিজেপি-র নেতৃত্বে খুব শীঘ্রই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাবে এবং মূল ধারার রাজ্যগুলির সমতুল্য হবে এই রাজ্য৷ তিনি বলেন, সাধারণত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া প্রবল আকার ধারণ করে৷ কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, ২০১৪ সালে বিজেপি ১৭ কোটি ভোট পেয়েছিল৷ কিন্তু, ২০১৯ সালে তা বেড়ে ২৩ কোটি ভোটে পেয়েছে বিজেপি৷ তার মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি এবং ত্রিপুরায় প্রাপ্তি ১০ লক্ষ ভোট৷
রাম মাধব জোর গলায় বলেন, কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার গঠন হয়েছে৷ দেশবাসীও শক্তিশালী সরকার হোক চেয়েছিলেন৷ তাই দীর্ঘ মেয়াদে বিজেপি দেশের ক্ষমতায় থাকবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷ তাঁর কথায়, স্বাধীনতার পর একটানা ২৭ বছর দেশে কংগ্রেস শাসন করেছে৷ কিন্তু, সেই রেকর্ড এখন নরেন্দ্র মোদী ভাঙতে চলেছেন ৷ তিনি আশ্বাস দেন, স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি পর্যন্ত কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে ৷ দেশের প্রগতি চরম শিখরে পৌঁছবে ততদিনে ৷ কারণ, নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্য, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বগুরু হবে ৷
দীর্ঘ দিন বিজেপি-র ক্ষমতায় টিঁকে থাকার কারণও রাম মাধব ব্যাখ্যা করেছেন ৷ তাঁর কথায়, গত পাঁচ বছরে দেশে একতা ও শান্তি বজায় রেখেছে বিজেপি ৷ অর্থব্যবস্থাকে চাঙ্গা করা হয়েছে ৷ শুধু তা-ই নয়, এই পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি দুর্নীতির ঘটনাও ঘটেনি ৷ বরং ১৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ে তোলার পাশাপাশি শক্তিশালী দেশ গঠন বিজেপি-র একমাত্র লক্ষ্য ৷ তাই, লোকসভা নির্বাচনে দেশবাসী ঢেলে সমর্থন দিয়েছেন ৷
রাম মাধব আজ আক্ষেপ করে বলেন, বিরোধীরা বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবাদ ধবংস করার অভিযোগ তুলেছেন ৷ তাতে তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, রাষ্ট্রবাদ বিজেপি-র ডিএনএ-তে মিশে রয়েছে ৷ রাষ্ট্রবাদই বিজেপি-র পরিচয় ৷ তাই, আমরা রাষ্ট্রবাদী হিসেবে গর্ব অনুভব করি ৷ সাথে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ৷ অথচ, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনীকে সবচেয়ে মর্যাদা দিয়েছে ৷
রাম মাধব দাবি করেন, দেশের ও দেশবাসীর গরিমা বাড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ কারণ, তিনি দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সমাদৃত ৷ তাই, দেশবাসী নরেন্দ্র মোদীকেই সমর্থন জানিয়েছেন ৷ কারণ, নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প এ-দেশে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তা দেশবাসী বুঝে গেছেন ৷
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আজ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, বিজেপি-কে যাঁরা ভোট দিয়েছেন এবং যাঁরা ভোট দেননি তাঁদের সকলের উন্নয়নে সমানভাবে কাজ করবেন নরেন্দ্র মোদী৷ ত্রিপুরাকেও ঢেলে সহযোগিতা দেবেন তিনি৷ কারণ, সব-কা সাথ সব-কা বিকাশের সাথে এখন সব-কা বিশ্বাস অর্জনেরও অঙ্গীকার নিয়েছে বিজেপি৷