ঝড়ে লন্ডভন্ড রাজ্যের তিন জেলা, বজ্রপাতে হত এক, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ উদয়পুর/ চড়িলাম, ১ জুন ৷৷ ভোরের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে রাজ্য৷ দক্ষিণ জেলা, সিপাহিজলা জেলা এবং পশ্চিম জেলায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে৷ ভোরে রবার সংগ্রহ করতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ আগরতলার বলদাখাল, ওরিয়েন্ট চৌমুহনি, অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক, থানা রোড, চন্দ্রপুর, রানিরবাজার, খয়েরপুর এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ এদিকে, সদর, জিরানিয়া, মোহনপুর, বিশালগড় এবং সোনামুড়া মহকুমায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ ঝড়ের প্রকোপে বিলোনিয়ায় তিনজন আহত হয়েছেন৷ তাঁদের জিবি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷ ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির খোঁজখবর নিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষামন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা৷ ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা এবং বাড়িঘর মেরামতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি৷


শনিবার ভোরে ৪০ থেকে ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ত্রিপুরার তিনটি জেলায় আছড়ে পড়ে ঝড়৷ সাথে শুরু হয় বৃষ্টি৷ প্রচণ্ড বাতাসের সাথে ভারী বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ রাজ্য দুযর্োগ মোকাবিলা দফতরের প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ জেলার বিলোনিয়া মহকুমার রাজনগর, ডিসিনগর, শান্তিরবাজার মহকুমার জোলাইবাড়ি, শান্তিরবাজার পুর পরিষদ এলাকা, সিপাহিজলা জেলার জম্পুইজলা মহকুমার জম্পুইজলা ব্লক, বিশালগড় মহকুমার বিশালগড় ব্লক, চড়িলাম ব্লক, সোনামুড়া মহকুমার কাঠালিয়া, নলছড় এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর মহকুমার পুর নিগম এলাকা, ডুকলি, জিরানিয়া মহকুমার জিরানিয়া ব্লক এবং মোহনপুরে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷
রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া মহকুমার রাজনগরে ঝড়ে পাঁচটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এছাড়া, তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন৷ তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ বিলোনিয়ার ডিসিনগরেও ঝড়ে ১৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে ১০টি আংশিক এবং ৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে, শান্তিরবাজার মহকুমায় জোলাইবাড়িতে ঝড়ে ২২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, ১৯টি বাড়ি আংশিক এবং ৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ শান্তিরবাজার পুর পরিষদ এলাকায়ও ১৩টি পরিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাঁদের ১০টি বাড়ি আংশিক এবং ৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ জেলা প্রশাসনের তরফে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে৷
এদিকে, সিপাহিজলা জেলার জম্পুইজলা মহকুমার জম্পুইজলায় ১৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাঁদের ১২টি বাড়ি আংশিক এবং ৪টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ রিপোর্টে প্রকাশ, আজকের ঝড়ে বিশালগড় এবং সোনামুড়া মহকুমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বিশালগড়ে ৮৪টি পরিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, ২৫টি বাড়ি আংশিক, ৩২টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ২৭টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঝড়ের সময় এক ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত

হয়েছেন৷ তাঁকে মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷
এদিকে, গকুলনগরে বগায়ামুড়ায় একটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ সেখানে ২২ পরিবারের ৪৪ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া একটি স্বাস্থ্য শিবির ও ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ চড়িলামেও ৩টি পরিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
সোনামুড়া মহকুমায় কাঠালিয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ঝড়ের৷ কাঠালিয়ায় ৫০টি পরিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ৩১টি বাড়ি আংশিক, ১৬টি বাড়ি মারাত্মক এবং ৩টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ একই মহকুমার নলছড়ে ২টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক জানিয়েছেন, আজ ভোরের ঝড় ও ভারী বর্ষণে জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পশ্চিম জেলার ৩টি মহকুমায় মোট ৯০৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ১০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ তাতে ৩৭৭ পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া, দুজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন৷ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন৷
আগরতলায় বলদাখাল, ওরিয়েন্ট চৌমুহনি, অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক, থানা রোড, চন্দ্রপুর, রানিরবাজার, খয়েরপুর এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ পাম্পের সাহায্যে দ্রুত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জেলাশাসকের কথায়, হাওড়া নদীর জলস্তরের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে৷ আপাতত জলস্তর স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে৷ ঝড়ে আগরতলায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি, তার ছিড়ে পড়েছে৷ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বড় গাছও ভেঙে পড়েছে৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই সমস্ত গাছ রাস্তা থেকে সরানো হয়েছে৷
এদিকে, গোমতি জেলার অন্তর্গত উদয়পুরের রাজনগর বরটিলা এলাকায় সকাল সাড়ে ৬-টা নাগাদ হারুন মিয়াঁ (২৯) রবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেখানে বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়৷ হারুনের বাবা জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের মতোই আজ ভোর ৫-টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় হারুন৷ প্রতিদিন ওই সময় রবার সংগ্রহে যায় বলে হারুনের বাবা জানিয়েছেন৷ আবার ৮-টা নাগাদ ফিরেও আসে৷ কিন্তু আজ দেরি হচ্ছে দেখে হারুনের খোঁজে রবার বাগানে যান তাঁর বাবা৷ গিয়ে দেখেন, রবার বাগানে পড়ে রয়েছে হারুন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিত্রা থানায় খবর দেওয়া হয়৷ পুলিশ এসে দেখে হারুনের মৃত্যু হয়েছে৷ পুলিশ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে টেপানিয়া হসপিটালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে৷
এদিকে, ঝড়ে বিধবস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষামন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা৷ তিনি সিপাহিজলা জেলার কমলাসাগরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির খোঁজখবর নিয়েছেন৷ ক্ষতিগ্রস্তদের পাঁচ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তাছাড়া, বাড়িঘর মেরামত করে দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *