দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সম্পন্ন, ত্রিপুরায় নেশা বিরোধী অভিযানকে কুর্ণিশ জানাল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মে৷৷ রাজ্যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় নেশা বিরোধী অভিযানে দারুণ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে৷ আজ সে-কথা অকপটে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলার জেলা শাসক তথা উপ কমিশনার মহম্মদ তোফায়েল ইসলাম৷ তাঁর কথায়, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় নেশা বিরোধী অভিযানের কারণে নেশা সামগ্রীর চোরাচালান অনেকটা হ্রাস পেয়েছে৷ তবে, এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌছায়নি৷ রাজ্য সরকারের নেশা সামগ্রী পাচারে কঠোর অবস্থান খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি৷


সোমবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জেলা শাসক এবং জেলা কালেক্টর পর্যায়ের ক্লাস্টার ফোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বাংলাদেশ থেকে মৌলভিবাজার, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার জেলা কালেক্টর সহ বিজিবি, রেব এবং বাংলাদেশ পুলিশ মিলিয়ে মোট ২২ জন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন৷ ত্রিপুরা থেকে উত্তর, ঊনকোটি এবং ধলাই জেলার জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার, বিএসএফ সহ পদস্থ আধিকারিকরা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন৷
আজ বৈঠক শেষে উত্তর জেলার জেলা শাসক সি কে জমাতিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এমনই একটি বৈঠকে গৃহিত সিদ্ধান্তগুলি কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট আজ পেশ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের তরফে ওই রিপোর্ট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে৷ তিনি জানান, আজকের বৈঠকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ ভারত ও বাংলাদেশ ওই বিষয়গুলি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে৷


সি কে জমাতিয়ার কথায়, নেশা সামগ্রী পাচার, নারী ও শিশু পাচার, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া, বর্ডার হাট ও বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ তাতে, উভয় দেশ ওই সমস্যাগুলি সমাধানে একে অপরকে সহযোীগতার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া সীমান্তে পিলার সংস্কারের বিষয়েও উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌছেছে৷ সি কে জমাতিয়ার দাবি, দুই দেশের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার বিষয়েও আলোচনা সফল রয়েছে৷


বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলার উপ কমিশনার তথা জেলা শাসক মহম্মদ তোফায়েল ইসলাম ভারতের সাথে বৈঠকে আলোচিত বিষয়ে একমত বলে জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, এধরনের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে৷ তাঁর কথায়, সীমান্তে অপরাধজনিত সমস্যা দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতায় সমাধান সম্ভব৷ তাছাড়া, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া এবং সীমান্ত বাণিজ্য ও বর্ডার হাট নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট ফলপ্রসু রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷
মহম্মদ তোফায়েল ইসলামের বক্তব্য, দুই দেশের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে ভুল বুঝাবুঝি রয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু, আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে৷ তাঁর কথায়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নানা সময়ে পরীক্ষিত৷ তাই, এধরনের বৈঠক দুই দেশের মধ্যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হলে ভুল বুঝাবুঝি অনেকটাই মিটবে৷


এদিন তিনি জানান, বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলায় কোন উগ্রপন্থী ঘাঁটি নেই৷ এ-বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্ণেল মহিউদ্দিনের দাবি, খাগড়াছড়ি কিংবা রাঙামাটিতে স্বাধীনতার পরবর্তী দীর্ঘ সময় কোন বিওপি ছিল না৷ কিন্তু, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ওই অঞ্চলে বিওপি স্থাপন করা হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, এখন পর্যন্ত কুড়িটির অধিক বিওপি স্থাপন করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় অংশ ব্যবহার করে বিওপিগুলি স্থাপন করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে আরো বিওপি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ কর্ণেল মহিউদ্দিনের মতে, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে বিওপি স্থাপনের ফলে সীমান্ত সমস্যা এবং উগ্রপন্থী গতিবিধিতে নজরদারীর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়েছে৷


এদিকে, নেশা সামগ্রী পাচার এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ মহম্মদ তোফায়েল ইসলামের কথায়, নেশা সামগ্রী চোরাচালান নিয়ে বাংলাদেশে প্রত্যেক ডিসি অফিসে প্রতি মাসে বৈঠক করা হয়৷ ওই বৈঠকে নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সংগ্রহের পর এবিষয়ে আলোচনা হয়৷ তাতে দেখা গিয়েছে, প্রতি মাসেই নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত হলেও এর ব্যবহার কমছে না৷
তবে, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় নেশা বিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেছেন মহম্মদ তোফায়েল৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় নেশা বিরোধী অভিযানের বিরাট প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে৷ নেশা সমাগ্রী চোরাচালান অনেক কমেছে৷ কিন্তু, কিছু নেশা সামগ্রীর চোরাচালানে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি৷ তাঁর মতে, ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে চিন্তার বিষয় দাঁড়িয়েছে৷ মায়ানমার এবং ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে ঢুকছে৷


এ-বিষয়ে বিজিবি-র কর্ণেল মহিউদ্দিনের বক্তব্য, নেশা সামগ্রী পাচার এবং ব্যবহারের ঘটনা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সত্বেও চাহিদা কমছে না৷ কারণ, নেশা মাফিয়াদের জালে তুলতে না পারলে ওই সমস্যার সমাধান হবে না৷ মহম্মদ তোফায়েল এবং কর্ণেল মহিউদ্দিন আজ নেশা বিরোধী অভিযানের জন্য ত্রিপুরা সরকারের প্রশংসা করেছেন৷ গত দেড় বছরে ত্রিপুরায় নেশার বিরুদ্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এর জন্য তাঁরা ত্রিপুরা সরকারকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন৷