BRAKING NEWS

বাংলাদেশে প্রতি আড়াই মিনিটে জনসংখ্যায় যুক্ত হচ্ছে ১০ জন

ঢাকা, ২৬ মে (হি.স.) : বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার। এর মধ্যে কর্মক্ষম জনশক্তি ১১ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার। তার মধ্যে কর্মক্ষম নারী ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার আর কর্মক্ষম পুরুষ ৫ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার। কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ। খন্ডকালীন (পার্টটাইম) কাজের খোঁজে ছোটাছুটি করছেন ১৪ লাখ মানুষ। ১৩ সেকেন্ডে একজন জন্মগ্রহণ করছে আর ১৪৪ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে মোট জনসংখ্যায় ১১ জন বৃদ্ধির বিপরীতে একজনের মৃত্যু হয়। আড়াই মিনিটে মোট জনসংখ্যায় ১০ জন যুক্ত হয়। দিনে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার মানুষ।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্যে বলা হচ্ছে, ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখের মতো, ১৯৯১ সালে হয় ১০ কোটি ৬৩ লাখ এবং ২০১১ সালে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ২৩ লাখে। জনসংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি)-এর প্র্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, জানুয়ারি, ২০১৮-তে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার আর নারী ৮ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার। তথ্য সংগ্রহ থেকে নতুন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। দ্রুত প্রকাশ করা হবে।


বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ৪৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এক দিন থেকে ১৪ বছরের শিশু এবং ৬৫-ঊর্ধ্ব জনসংখ্যাই মূলত নির্ভরশীল। সংখ্যার হিসাবে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৭৮ হাজার মানুষই নির্ভরশীল। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ছিল ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী। দেশের ২৭ শতাংশ মানুষের বয়স ছিল ১৫ বছরের নিচে। আর ৮ শতাংশ হচ্ছে ষাটোর্ধ্ব।


বিশ্লেষকদের মতে দীর্ঘদিন জনসংখ্যাকে আমাদের দেশে সমস্যা মনে করা হতো। এর কারণ হল, জনসংখ্যার যে বিন্যাস তাতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেশি ছিল। ১৯৭৪ সালের জনগণনা অনুসারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল আড়াই শতাংশ। ১৯৭০ সালে ছিল তিন শতাংশ। ’৭৪ সালে মোট জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ ছিল ১৫ বছরের কম বয়সী। আর ৬০ বছরের ওপরে ছিল পাঁচ শতাংশ। তাই দুটি মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ মানুষ ছিল পুরোপুরি নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী। বাকি যে ৪৭ শতাংশ তার অর্ধেক নারী। ওই সময়ে বাংলাদেশে নারীরা ঘর থেকে বের হতো না। তখন কর্মজীবী নারীর সংখ্যা শতকরা এক-দুই ভাগের বেশি ছিল না। শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ এই পুরো জনগোষ্ঠীকে কাঁধে করে টেনে নিয়ে গেছে। তাই তখন এই জনসংখ্যাকে বোঝা মনে হয়েছে। কিন্তু এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। মৃত্যুহার কমেছে। গড় আয়ু বেড়েছে।


জনসংখ্যাবিদ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কর্মক্ষম জনসংখ্যার (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) দিক দিয়ে, বাংলাদেশ বর্তমানে স্বর্ণযুগে অবস্থান করছে। যখন কোনও দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি কর্মক্ষম থাকে তখন ওই দেশ ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালে অবস্থান করছে বলে ধরা হয়। মনে করা হয়, এই জনসংখ্যা কোনও না কোনওভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে তা দেশের জিডিপিতে অবদান রাখে। এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

কিন্তু বাংলাদেশে পুরো জনগোষ্ঠী কাজে লাগছে না। বিবিএসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৮ লাখ। যেখানে সংখ্যার হিসাবে ১১ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ কর্মক্ষম। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি কর্মক্ষম মানুষ যুক্ত হচ্ছে। অবশ্য অন্যদিকে, প্রজননহার কমে যাওয়া এবং গড় আয়ু বাড়ার ফলে দেশের জনসংখ্যার বয়সকাঠামো বদলে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে ১৪ লাখ পুরুষ ও ১৩ লাখ নারী বেকার। ত্রৈমাসিক বেকারত্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই সময়ে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এই সময় সর্বোচ্চ ২৯ লাখ মানুষ বেকার ছিল।


দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি কিংবা আগামি বছরও হারটি কমবে না। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। আইএলওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার ছিল ২০১০ সালে।

এর পর থেকে তা বাড়ছে। ওই বছর মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার ছিল, যা ২০১৬ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আইএলওর হিসাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা করছে আইএলও। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারত্বের হার মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় পাঁচ ভাগ। তবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে সন্তুষ্ট নয়। তারা নিজেদের প্রক্ষেপণ অনুসরণ করে মনে করছে, বেকারত্বের প্রকৃত হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ হবে। জনসংখ্যাবিদ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার কাজে ২৫টি মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *