শিলচর (অসম), ১৯ মে (হি.স.) : আজ ১৯শে মে। ব্যাপক কার্যসূচির মাধ্যমে এদিন ভাষা শহিদ দিবস পালন করেছে বরাক উপত্যকা। ১৯শে মে উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান হয় শিলচরের রেল স্টেশনের প্রবেশদ্বারে। সকাল ৬-টা থেকে স্টেশন চত্বরে শুরু হয় ১১ জন শহিদকে শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে মানুষ এসে জড়ো হন এখানে। ভাষা শহিদ স্মারকে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেন তাঁরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাড়াও ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষ ভাষা শহিদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে জমায়েত হয়েছিলেন।
বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ১৯৬১ সালের ১৯ মে পুলিশের গুলিচালনায় ১১ জন শহিদ হয়েছিলেন শিলচর রেল স্টেশনে। তাই প্রতিবছরই মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় শিলচর রেল স্টেশন চত্বরে। রবিবার সকালে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে স্টেশন চত্বরে পৌঁছে যান রাজ্যের বন ও পরিবেশ এবং আবগারি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সাংসদ তথা শিলচর সংসদীয় আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতা দেব, শরিফুজ্জামান লস্কর অনেকেই। তাঁরা একে একে শহিদ মিনারে একাদশ শহিদকে শ্রদ্ধা জানান।
‘ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি’র সভাপতি বাবুল হোড়ের পৌরোহিত্যে এক সভায় বিভিন্ন বক্তা বাংলা ভাষার জন্য যে ১১ জন শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের স্মরণ করে বক্তব্য পেশ করেন। বিভিন্ন বক্তা শিলচর রেল স্টেশনের নাম ‘ভাষাশহিদ স্টেশন শিলচর’ করার জোড়ালো দাবি উত্থাপন করেন।
সকাল ৮-টা থেকে শিলচর শ্মশানঘাটে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান শুরু হয়। লাইন ধরে সবাই এগিয়ে গিষ়ে প্রত্যেক ভাষাশহিদের নামাঙ্কিত পৃথক পৃথক সৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। দুপুরে শিলচর গান্ধীবাগের শহিদ মিনারে শহিদের শ্রদ্ধা অর্পণ করতে ভিড় জমে।
এ বছর ভাষাশহিদ দিবসে অসমে বাঙালিদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ ওঠেছে। শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পের বাইরে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদানের দাবি ওঠে। অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপধীর ভট্টাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, প্রত্যেক বাঙালি জন্মগত অপরাধী নয়। কিন্তু অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প, ডি তকমা, এনআরসি-র নামে বাঙালিদের সীমাহীন যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। যাকে অমানবিক আখ্যা দেন তপধীরবাবু। প্রকৃত ভারতীয় বাঙালিদের যেভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে ধিক্কার জানিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, অহেতুক ডি তকমা সেঁটে বাঙালিদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর জন্য রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সওয়াল ওঠান তিনি।
ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে অসমে বাঙালিদের অযথা নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেকই ডিটেনশন ক্যাম্পের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। এ-সব ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য পেশ করেন কমল চক্রবর্তী। যাঁরা ডিটেনশন ক্যাম্পে তিন বছর কাটিয়েছেন তাঁদের ২ লক্ষ টাকা বন্ডে জামিন দেওয়ার যে রায় প্রদান করা হয়েছে তা সহজে মেনে নেওয়া যায় না। কারণ ডিটেনশন ক্যাম্পে যাঁরা বন্দি, তাঁদের প্রায় সকলেই দরিদ্র। যাঁদের পক্ষে দুশো টাকা জোগাড় করা কঠিন তাদের পক্ষে দুই লক্ষ টাকা বন্ড দেওয়া স্বপ্নের মতো। এ-ধরনের যে রায় দেওয়া হয়েছে তার মানে কারোর অজানা থাকার নয় বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
আজ সন্ধ্যায় বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে, ক্লাবে মোমবাতি জ্বালিয়ে একাদশ শহিদকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।