নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ মে৷৷ বুধবার বিকেলে ঘন্টা দেড়েকের ঝড়-বৃষ্টিতে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর ও মোহনপুর মহকুমায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ সদর মহকুমায় ৩৬টি এবং মোহনপুর মহকুমায় ২৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গতকাল সন্ধ্যাতেই মুখ্য সচিবের সাথে বৈঠক করেছেন৷ দুর্যোগ মোকাবিলায় সমস্ত ব্যবস্থা রাখার জন্য তিনি নিদের্শ দিয়েছেন৷ আগামীকাল মুখ্যমন্ত্রী কলেজটিলায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করবেন৷
রাজ্য দূর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিক শরৎ দাস জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলের ঝড়-বৃষ্টিতে পশ্চিম ত্রিপুরায় জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ তবে, সমগ্র পশ্চিম ত্রিপুরা নয়, সদর ও মোহনপুর মহকুমায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, গাছ ভেঙ্গে রাস্তায় যানজট দেখা দিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ পরিষেবাও ব্যহত হয়েছে৷
শরৎবাবুর কথায়, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর মহকুমায় শুধু মাত্র পুর নিগম এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ তিনি বলেন, পুর এলাকায় ২টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৩৪টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এছাড়া, কলেজ টিলা, এম বি টিলা এবং এ ডি নগর পুলিশ লাইনের সামনে রাস্তায় বড় বড় গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়েছে৷ তাতে দীর্ঘ সময় যানজট দেখা দিয়েছিল৷ তিনি আরও জানান, আগরতলা শহরে গতকাল অনেক রাস্তা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছিল৷ এ-কারণেও গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে দীর্ঘ সময় আগরতলা শহরে প্রচন্ড যানজট দেখা দিয়েছিল৷
তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে৷ কিছু স্থানে বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়েছে৷ আবার কোথাও ঝড়ে বিদ্যুতের খঁুটি ভেঙ্গে পড়েছে৷ ফলে, আগরতলায় বিভিন্ন এলাকা আজ দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না৷ তিনি জানান, বাকি এলাকাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও কলেজটিলায় সমস্যা সমাধানে আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে৷
এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গতকাল আগরতলায় জল নিস্কাশনে পাম্পগুলি চালানো যায়নি৷ তাতে, শহর আগরতলায় আজ সকাল পর্যন্ত কয়েকটি রাস্ত জলমগ্ণ ছিল৷ তবে, আজ বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতেই বৃষ্টির জল সরানো হয়েছে৷
শরৎবাবু জানিয়েছেন, গতকাল ঝড়ে মোহনপুর মহকুমায় ২৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ তবে, কোন শরণার্থী শিবির খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷
এদিকে, ১ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ত্রিপুরাতে ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির এক তথ্য তুলে ধরেছেন শরৎ দাস৷ তিনি জানান, ঝড়ে ধলাই জেলায় এ-মাসে ৫টি বাড়ি পুরোপুরি, ২২টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ২৩৪টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ একইভাবে, গোমতি জেলায় ৩৪টি বাড়ি পুরোপুরি, ১২টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৩০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ খোয়াই জেলায় ২০টি এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৭৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এদিকে, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১১টি বাড়ি আংশিক এবং সিপাহীজলা জেলায় ১টি বাড়ি পুরোপুরি ও ১০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যায় ঝড়ে কলেজটিলা, বাধারঘাট, বড়দোয়ালী, শিবনগর, যোগেন্দ্রনগর, প্রতাপগড়, মিলনচক্র, শ্রীপল্লী, কবিরাজটিলা, জি বি, দূর্জয়নগর, ক্যাপিটেল কমপ্লেক্স সহ বেশ কিছু সন্নিহিত এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পর্ণভাবে বিধস্ত হয়৷ ওই এলাকাগুলোতে গাছ ভেঙ্গে বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ছিঁড়ে পড়ে৷ বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুতের খঁটি ভেঙ্গে পড়ে৷ ঝড়ের অব্যবহিত পরেই বিদ্যুৎ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মার নির্দেশে ও এস ডি রাহুল দাশ সহ বিদ্যুৎ নিগমের সকলস্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে পরিষেবা স্বাভাবিক করতে মাঠে নামেন এবং তাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিধস্ত এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকারই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়৷ বিদ্যুৎ দপ্তর আশা করছে,শুক্রবার সকালের মধ্যেই ১০০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হবে৷
গত ১৩ ও ১৪ মে অনুরূপ ঝড়ে খোয়াই জেলার আশারামবাড়ী, বেহালাবাড়ি, চাম্পাহাওর, কল্যাণপুর, দ্বারিকাপুর, তুলাশিখর সহ বেশ কিছু সন্নিহিত এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পর্ণভাবে বিধস্ত হয়৷ তাছাড়াও কৈলাসহর ও ধলাই জেলার বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘিত হয়৷ নিগমের বিশেষ তৎপরতায় ইতিমধ্যেই উক্ত এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়েছে৷
এদিকে, ঝড়ের পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যাতেই পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মুখ্য সচিবের পাশাপাশি নগর উন্নয়ন দপ্তর এবং পূর্ত দপ্তরের পদস্থ আধিকারীকদের সাথেও তিনি আলোচনা করেছেন৷ মূলত জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন৷ তাছাড়া শহরে রাস্তায় জলমগ্ণ হয়ে পড়লে ট্রাফিক ব্যবস্থা সঠিক রাখার জন্য রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন৷