কলকাতা, ১৫ মে(হি.স.): সরানো হল স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে| নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দিলেন তাঁকে| তাঁর কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল| বুধবার নির্বাচন কমিশনের পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচায্যকে| তাঁর বদলে দায়িত্ব দেওয়া হল রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে|
নজিরবিহীনভাবে নির্বাচনের প্রচারের সময়ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে| শুক্রবার রাত পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল সপ্তমদফা নির্বাচনের প্রচার| কিন্তু তা কমিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় নিয়ে আসা হল| সূত্রের খবর এই প্রথম ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করল কমিশন| যা কার্যত বেনজির|
এই ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি খতিয়ে ভোট গ্রহনের স্বার্থে প্রশাসনিক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে| এদিন গুরুত্বপূর্ন আরও একটি সিদ্ধান্তে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমারকে বদলি করে দেওয়া হল| সম্প্রতি তাঁকে কমিশনের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডির অতিরিক্ত ডিজি পদে বদলি করা হয়েছিল| বুধবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “১৬ তারিখ সকাল ১০টায় তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে হাজির হতে বলা হয়েছে”| বেশ কিছুদিন ধরেই রাজীব কুমারের ‘পক্ষপাতিত্ব’ নিয়ে নানাভাবে অভিযোগ তুলছিল বিজেপি|
উল্লেখ করা যেতে পারে স্বরাষ্ট্র দফতর ছাড়াও পার্বত্য বিভাগের প্রধান সচিব ছিলেন অত্রিবাবু| তাঁকে সরানোর ব্যাপারে কমিশন কোনও স্পষ্ট কারণ দেখায়নি| তবে সূত্রের খবর, কমিশন মনে করছিল নির্বাচনের সময় প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন অত্রিবাবু|
এই পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে ৭১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়া, ৫১২টি ক্যুইক রেসপন্স টিমও কাজ করবে। সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে আগামীকাল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তর ২৪ পরগনা যাবেন এবং ১৭ তারিখে তিনি দক্ষিণ কলকাতার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন। এছাড়াও, ১০ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং পাঁচজন পুলিশ পর্যবেক্ষক এই পর্যায়ে নির্বাচনের তদারক করবেন। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ৩৩টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য যথোপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন সপ্তম তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের নয়টি লোকসভার ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক, পুলিশ এবং সাধারণ পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের শান্তিপূর্ণভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ের ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ১৯ মে, রবিবার এই পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের নয়টি সহ দেশের আটটি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৫৯টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে। বুধবারের এই বৈঠকে এ রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া, মঙ্গলবার কলকাতায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শোকে ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়েও প্রাথমিকভাবে কমিশনকে জানানো হয়।
সপ্তম তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে এ রাজ্যে দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর (তপশিলি জাতি), মথুরাপুর (তপশিলি জাতি), ডায়মণ্ড হারবার,যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে। যথারীতি সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।