ইমফল, ১৩ মে (হি.স.) : মা হলেন মণিপুরের লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু। মাতৃদিবসের দিনই ফুটফুটে যমজ কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন ৪৭ বছরের ইরম শর্মিলা।
রবিবার ব্যাঙ্গালুরুর নিকটবর্তী মালেশ্বরমের ক্লাউড নাইন গ্ৰুপ অব হাসপাতালে সকাল নয়টা ২১ মিনিটে সিজারিয়ানের মাধ্যমে যমজ দুই কন্যার জন্ম দিয়েছেন তিনি। তাদের জন্মকালীন সময়ের ব্যবধান এক মিনিট। মা-সহ তাঁর নবজাতক সন্তানরা সুস্থ আছে বলে ডাক্তারদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ইরম শর্মিলার স্বামী ডেসমন্ড অ্যান্থনি। এদের ওজন যথাক্রমে দুই কেজি ১৬ গ্ৰাম এবং দুই কেজি ১৪ গ্ৰাম বলেও জানান তিনি। দুই নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে নিক্স সখী এবং অটোম তারা।মাতৃদিবসের দিন ইরমের মা হওয়ার ঘটনা কাকতালীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন চিকিৎসক ও ডেসমন্ড।
প্রসঙ্গত, জীবিতকালেই কিংবদন্তি হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন মণিপুরের ‘লৌহমানবী’ ইরম শৰ্মিলা। মণিপুর থেকে সশস্ত্র সেনাবাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্ৰত্যাহারের দাবিতে টানা ১৬ বছরর অনশন করেন তিনি। পরবর্তীতে গত ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট তাঁর অনশন ভঙ্গ করেছিলেন। ১৮ বছর আগে ২০০২ সালে আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে দশজন নিরীহ মণিপুরির মৃত্যুর পর মণিপুর থেকে আফস্পা প্ৰত্যাহারের দাবিতে তিনি অনশন শুরু করেছিলেন। অনশন শুরু করার তিনদিন পর মণিপুর সরকার আত্মহত্যার প্ৰচেষ্টা চালানোর অভিযোগে ইরমকে গ্ৰেফতার করেছিল। অবশ্য কারাগারে বন্দিদশায়ও তিনি তাঁর অনশন কর্মসূচি বজায় রেখেছিলেন। সেই তখন থেকে ইরম শৰ্মিলার নাক দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানীয় খাদ্য দেওয়া হচ্ছিল।
এর পর নিজের দৃঢ় স্থিতির জন্যই তাঁকে ‘লৌহমানবী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনশন ভঙ্গ করে সেদিন বলেছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর আদৰ্শ ও সিদ্ধান্তগুলি তাঁকে অনুপ্ৰাণিত করেছে। সমাজ থেকে হিংসা, কলুষ দূর করার সংকল্প নিয়েই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করবেন বলে ঘোষণা করার মাস-দুয়েক পর ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর নতুন দল পিপলস রিসার্জেন্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স (প্রজা) গড়ে সে কাজে নেমে পড়েন ইরম শর্মিলা। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রজা-র প্রার্খী ইরম ৩১ নম্বর থউবাল বিধানসভা আসনে দাঁড়িয়ে মাত্র ৯০টি ভোট পেয়ে পরাজিত হন।এর পর অভিমানের সঙ্গে রাজনীতির ময়দান থেকে একেবারে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ১১ মার্চ ফলাফল ঘোষণার পর জানিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আর রাজনীতি নয়। ‘মণিপুরের জনসাধারণ আমার সিদ্ধান্ত বুঝতে পারেননি। আমি কী চাই তা নতুন প্রজন্মকে বুঝতে আরও সময় লাগবে।’ তবে মণিপুরের কল্যাণে কাজ তিনি করে যাবেন বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছিলেন ইরম। মণিপুরের সমস্যা তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাবেন বলেও জানান সেদিন।
নির্বাচনে হেরে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়ে স্বাভাবিক সংসার জীবনে চলে যান লৌহমানবী। আট বছরের পরিচয় এবং আরও আট বছরের সমস্যাজর্জরিত সময় অতিক্রম করে ব্রিটিশ-প্রেমিক ৪৮ (সে সময়ের বয়স) বছরের ডেসমন্ড অ্যান্থনি বেলারমাইন কুটিনহোর সঙ্গে বিবাহপাশে আবদ্ধ হন মানবাধিকারকর্মী ৪৫ বছরের ইরম শর্মিলা (জন্ম ১৪ মার্চ ১৯৭২)। তবে এই বিয়েকে খুব সহজভাবে নিতে পারছিলেন না শর্মিলার বাড়ির লোকজনের পাশাপাশি মণিপুরে তাঁর অনুগামীরা।
২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট তামিলনাড়ুর কোডাইকানালার সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে আইন মোতাবেক তাঁদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। তাঁরা দুজনে বিবাহপাশে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক বলে শর্মিলা ও ডেসমন্ড অ্যান্থনি ১২ জুলাই (২০১৭) কোডাইকানালার সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কতিপয় মানবাধিকার কর্মী এই বিয়ের বিপক্ষে আপত্তি তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের আশঙ্কা তুলে ধরে যুক্তি প্রদর্শন করে আদালতকে বলেছিলেন, বিতর্কিত ইরম শর্মিলা চানু যদি কোডাইকানালায় বিবাহকার্য সম্পন্ন করেন তা হলে এই পর্যটননগরের পরিবেশ জটিল হতে পারে। পরবর্তীতে এই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। আদলতের সবুজ সংকেত পেয়ে জনাকয়েক বন্ধু ও অনুগামীদের উপস্থিতিতে আইনি বিয়ে সম্পন্ন হয় ইরম-ডেসমন্ডের।