নজিরবিহীন ব্যবস্থা, নিরাপত্তায় ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী, এলেন দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মে৷৷ কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন৷ পশ্চিম আসনে মাত্র ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচনে ১৫ কোম্পানী কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, বিশেষ পর্যবেক্ষক বিনোদ জুৎসি রাজ্যে এসে ভোট প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন৷ কমিশন এখানে থেমে থাকেনি৷ ভোট নিরাপত্তা সুনিশ্চিতের প্রশ্ণে বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষককে রাজ্যে পাঠিয়েছে৷ এছাড়াও তিনজন সাধারণ পর্যবেক্ষক সহ অন্যান্য পর্যবেক্ষকদেরও ভোটের তদারকিতে নিয়োজিত করেছে কমিশন৷ স্বাভাবিক ভাবেই, ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচনকে কমিশন যেভোবে গুরুত্ব দিয়েছে তা নজিরবিহীন বলেই মনে হয়েছে৷


ত্রিপুরা পশ্চিম আসনের ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখা হয়নি বলে দাবি করেছেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বুথের ভেতরে এবং বাইরে ভিডিগ্রাফির সাথে অতিরিক্ত ভিডিওগ্রাফিরও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ শনিবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরুণিকান্তির কথায়, আগামীকাল ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ তাতে আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি৷ তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷


পশ্চিম আসনের পুণঃ নির্বাচনে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) জানিয়েছেন, ১১ কোম্পানি বিএষএফ এবং ৪ কোম্পানি সিআরপিএফ ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে৷তিনি বলেন, ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সমস্ত বুথেই কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, বুথ কম হলেও নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করা হয়নি৷ পুণঃ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে৷ ভোটে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকে ত্রিপুরা পুলিশও নজর রাখছে৷ তাঁর বক্তব্য, ভোটের নিরাপত্তায় ১১ কোম্পানি বিএসএফ এবং ৪ কোম্পানি সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে৷ এছাড়াও, ত্রিপুরা পুলিশ ভোট পরিস্থিতি নিয়ে নজরদারি রেখেছে৷


এদিকে, মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরুণিকান্তি জানিয়েছেন, রবিবার সাকল ৭-টা থেকে বিকাল ৫-টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া৷ ইতিমধ্যে ১৬৮টি বুথেই ভোটকর্মীরা ভোট-সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন৷ তিনি জানান, প্রত্যেকটি বুথের ভেতরে এবং বাইরে ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সাথে অতিরিক্ত ভিডিওগ্রাফিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷
তিনি জানান, পুণঃ নির্বাচনে নজরদারির জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষক বিনোদ জুৎসি এবং বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক এমকে দাস এসেছেন৷ তাঁরা আজ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেছেন৷ তাছাড়া, পশ্চিম জেলা, সিপাহিজলা জেলা, গোমতি জেলা এবং দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারদের সাথে বিশেষ পর্যক্ষেক বিনোদ জুৎসি ভিডিও কনফারেন্সিঙে নির্বাচনী প্রস্তুতির খবর নিয়েছেন৷


শ্রীরাম তরুণিকান্তি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিন সাধারণ পর্যবেক্ষকও রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন৷ তাছাড়া কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী পুণঃ নির্বাচন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় গতকাল থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ১৬৮টি বুথে পুণঃ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল৷ সিমনা, মোহনপুর, বামুটিয়া, বরজলা, রামনগর, টাউন বড়দোয়ালি, প্রতাপগড়, বাধারঘাট, খয়েরপুর, মজলিশপুর, মান্দাই বাজার, টাকারজলা, গোলাঘাটি, কমলাসাগর, বিশালগড়, চড়িলাম, বক্সনগর, নলছড়, সোনামুড়া, ধনপুর, বাগমা, রাধাকিশোরপুর, মাতাবাড়ি, কাকরাবন-শালগড়া, রাজনগর এবং বিলোনিয়ায় আগামীকাল পুনভর্োট হবে৷ তাতে, মোট ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৪১ হাজার ২৫১ জন৷ তাদের মধ্যে পুরুষ ৭১ হাজার ৯২০ জন, মহিলা ৬৯ হাজার ৩২৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৩ জন ভোটার রয়েছেন৷
এদিকে, আগামীকাল রাজ্যের পশ্চিম আসনের ১৬৮টি বুথের মধ্যে সবকটি বুথই স্পর্শকাতর৷ সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে এই বুথগুলিতে৷ রাজধানীর উমাকান্ত অ্যাকাডেমির স্টোররুম থেকে ইভিএম, ভিভিপ্যাট-সহ ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ভোটকর্মীরা বুথের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে৷ তাঁদেরকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বুথে বুথে পৌঁছে দিচ্ছেন৷


উমাকান্ত অ্যাকাডেমি থেকে মোট ২১টি বুথের সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান সদর মহকুমাশাসক তথা এই লোকসভা নির্বাচনের অ্যাসিটেন্ট রির্টানিং অফিসার (এআরও) নাণ্টুরঞ্জন দাস৷ তিনি জানান, ২১টি বুথের জন্য মোট ১০৫ জন ভোটকর্মী, ২১ জন মাইক্রো অভজারভার, ১৪ জন সেক্টর অবজারভার নিয়োজিত করা হয়েছে৷ এছাড়া পর্যাপ্তসংখাক রির্জার্ভড কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মী রাখা হয়েছে৷ প্রয়োজনে তাঁদের কাজে লাগানো হবে৷ যেহেতু ১৬৮টি বুথই স্পর্শকাতর, সেজন্য যে-ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন তা নেওয়া হয়েছে৷ তবে এবার ভোটের কাজে কোনও মহিলা কর্মীকে কাজে লাগানো হয়নি বলেও জানান তিনি৷


গত ১১ এপ্রিল পশ্চিম লোকসভা আসনে ভোটের সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে, এবার এ বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে৷ এগুলি যাতে সঠিকভাবে কাজ করে এবং যদি কোনও ত্রুটি দেখা দেয় তা-হলে কর্মীরা যাতে দ্রুত তা সারাই করে কর্মক্ষম করে তুলতে পাররেন সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ শুধুমাত্র সিসিটিভি কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক লোক নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান এআরও৷


অপরদিকে এই পুনর্নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমতলি এলাকার এসডিপিও অজয়কুমার দাস বলেন, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে৷ প্রতিটি বুথে একজন করে নিরাপত্তার জন্য সেক্টর অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে৷ প্রতিটি বুথের বাইরে দুটি করে পুলিশ নাকাচেকিঙের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রতিটি বুথের ভেতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে৷ বুথের নিরাপত্তার পাশাপাশি যে এলাকায় ভোট হচ্ছে সেই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস এবং পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ এই টহলধারী আগামীকাল বিকেল ৫-টায় ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে৷ নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে যাতে প্রত্যেক ভোটার নির্ভয়ে তাদের মতাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন৷