ঢাকা, ১২ মে (হি. স.) : ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) বৌদ্ধ পূর্ণিমার সময় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) অথবা ইসলামিক স্টেট (আইএস) পশ্চিমবঙ্গ অথবা বাংলাদেশে ‘ফেদাইন’ হামলা চালাতে পারে, এই সতর্কতা জারির পর বাংলাদেশে আরও নড়ে-চড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা মতাবলম্বী ব্যক্তি বা উপাসনালয়ে জঙ্গিরা হামলা করতে পারে। এজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও হামলা চালাতে পারে জানিয়ে গোয়েন্দা নজরদারি, টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দফতরে গতকাল এক সভায় কমিশনার এই নির্দেশনা দেন। সভায় ঢাকার ৫০ থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা নির্ভরযোগ্য একজন ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক জঙ্গিদের বিভিন্ন হুমকি ও নতুন করে সংগঠিত হওয়ার খবর গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবিলার জন্য নির্দেশনা দেন কমিশনার। বিশেষ করে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে গুলশান-বারিধারা, বিদেশি নাগরিকদের কর্মস্থল ও আবাসস্থল, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো আগামি ১৮ মে বৌদ্ধপূর্ণিমায় পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশে জঙ্গিরা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। গত মাসে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে এমনিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যেই গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তান এলাকায় তিন পুলিশ সদস্যের ওপর বোমা হামলা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর সেই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস। ওই দিন সকালেই এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়। আল-কায়েদা সমর্থিত বালাকোট মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গিদের ‘লোন উলফ’ হামলার পরিকল্পনার খবরও প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। অবশ্য পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, আসন্ন বৌদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক হামলার সুনির্দিষ্ট কোনও আলামত নেই। তারপরও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে বৌদ্ধ মন্দির সহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পুলিশের সকল ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাতে বলা হয়েছে। জঙ্গি প্রতিরোধেযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, সুনির্দিষ্ট হামলার তথ্য না থাকলেও আগে থেকেই পুলিশ সতর্ক রয়েছে। জঙ্গিরা তাদের নিজস্ব যোগাযোগ চ্যানেলে রমজান মাসকে হামলার জন্য ‘পবিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদান করেছে। একারণে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরবে যে গেরিলা যুদ্ধ হচ্ছে তাকে ফেদাইন আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ওই সতর্কতায় বলা হয়েছে, ফেদাইনরা অন্তঃসত্ত্বা নারীর বেশ ধরে হিন্দু বা বৌদ্ধদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করতে পারে হামলা চালাতে।