নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ মে৷৷ ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় আসনে গত ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৬৮টি বুথে ভোট বাতিল করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ তাই, আগামী ১২ মে ওই ১৬৮টি বুথে পুনঃ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কমিশন৷ পশ্চিম আসনে ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ওই বুথগুলিতে ১২ মে সকাল ৭-টা থেকে বিকাল ৫-টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে৷

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সচিব এসবি জোশি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে লেখা চিঠিতে বলেছেন, গত ১১ এপ্রিল ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় আসনে নির্বাচন নিয়ে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক, বিশেষ পর্য্যবেক্ষক, সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্ট এবং পারিপাশর্িক বিষয় বিবেচনার পর ১৬৮টি বুথে ভোট বাতিল করা হয়েছে৷ তাই, ওই বুথে আগামী ১২ মে রবিবার সকাল ৭-টা থেকে বিকাল ৫-টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে৷ কমিশন ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বুথ এলাকায় পুনভর্োটের প্রচার সঠিকভাবে করতে৷ পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের লিখিতভাবে পুণঃ নির্বাচন বিষয়ে জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে কমিশন৷
এ-বিষয়ে ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরণিকান্তি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় আসনে ১৬৮টি পুনভর্োটের ঘোষণা করেছে৷ পশ্চিম আসনে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, জানালেন তিনি৷ তাঁর কথায়, আগামী ১২ মে ত্রিপুরায় ১৬৮টি বুথে পুনরায় লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাতে, পশ্চিম জেলায় ৬৬টি, সিপাহিজলা জেলায় ৫৭টি, গোমতি জেলায় ২৮টি এবং দক্ষিণ জেলায় ১৭টি বুথ রয়েছে৷
বুথ সম্পর্কে শ্রীরাম তরুণিকান্তি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, পশ্চিম আসনে ৩০টি বিধানসভার মধ্যে ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ওই বুথে পুনভর্োট হবে৷ তাঁর কথায়, সিমনায় ১-টি, মোহনপুরে ৬-টি, বামুটিয়ায় ৬-টি, বড়জলায় ১-টি, রামনগরে ৪-টি, টাউন বরদোয়ালিতে ৩-টি, প্রতাপগড়ে ১০টি, বাধারঘাটে ৩-টি, খয়েরপুরে ১৮টি, মজলিশপুরে ১০টি, মান্দাইবাজারে ৪-টি, টাকারজলায় ৬-টি, গোলাঘাটিতে ২-টি, কমলাসাগরে ৫-টি, বিশালগড়ে ১৮টি, চড়িলামে ২-টি, বক্সনগরে ২-টি, নলছড়ে ৭-টি, সোনামুড়ায় ১-টি, ধনপুরে ১৪-টি, রাধাকিশোরপুরে ৯-টি, মাতাবাড়িতে ৭-টি, কাকরাবন-শালগড়ায় ৮-টি, রাজনগরে ৮-টি এবং বিলোনিয়ায় ৯-টি বুথে পুনভর্োট অনুষ্ঠিত হবে৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, খয়েরপুর এবং বিশালগড় বিধানসভা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ১৮টি করে বুথে পুনর্নির্বাচন হবে৷
শ্রীরাম তরুণিকান্তি বলেন, আগামী ১২ মে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ২৫১ জন ভোটার পুনভর্োট দেবেন৷ তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭১ হাজার ৯২০, মহিলা ৬৯ হাজার ৩২৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৩ জন ভোটার রয়েছেন৷ তাঁর দাবি, গত ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ভোটে গরমিল পাওয়া গিয়েছে তাই পুনভর্োটের আয়োজন করা হয়েছে৷ তবে, এবার কোনও গরমিলের সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, ভোট প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে পড়েছে৷ বুথের তুলনায় সেক্টর অফিসারের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় নজরদারি বাড়ানো সহজ হবে, বলেন তিনি৷
তাঁর বক্তব্য, পশ্চিম আসনে ভোট চরম অসন্তোষজনক, তাই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তিনি জানান, ১৬৮টি বুথে পুনর্নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মজুত রয়েছে৷ প্রথা অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে ফের ভোট যন্ত্রের কমিশনিং করা হবে৷ তিনি আরও জানান, পুনর্নির্বাচনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নিযুক্তির এখনও কোনও খবর নেই৷ গত এপ্রিলে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরাই এবারও ভোটের কাজে নিযুক্ত রয়েছেন৷ এদিকে, নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা এবং অনুমতির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা একই রয়েছে৷ তাছাড়া, প্রার্থীর খরচের সীমাও একই রয়েছে৷ প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম লোকসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে একসাথে এতগুলি বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন৷ এই ঘটনা নজিরবিহীন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের৷

