নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ মে৷৷ বাম আমলের মতো রাম আমলেও প্রতিটি মোটরস্ট্যান্ডে সিন্ডিকেট রাজত্ব চলছে৷ তাতে করে প্রায় প্রতিদিনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে৷ সোমবার দুপুরেও শহরের ব্যস্ততম নাগেরজলা মোটরস্ট্যান্ড কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে৷ তারপর শহরের সব মোটরস্ট্যান্ডেই যাত্রী পরিষেবা বন্ধ করে দেয় মোটর শ্রমিকরা৷ মূলত বিএমএস সংগঠনের অধীন মোটর শ্রমিকরাই বন্ধ করে দেয় যাত্রী পরিষেবা৷ জানা গিয়েছে, মোটর শ্রমিকদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরেই এই অস্বস্তীকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷
মোটর শ্রমিক এবং মোটর মালিক পক্ষের মধ্যে বিবাদের জেরে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছিল শ্রমিক সংগঠন বিএমএস৷ ফলে তীব্র সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা৷ শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-এর আগরতলা নাগেরজলা মোটর স্ট্যান্ড শাখার সদস্যদের অভিযোগ, গতকাল রাতে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে বচসা বাঁধে৷ একসময় মালিক পক্ষের কয়েকজন শ্রমিকদের বেধড়ক মারধর করেন বলে তাঁদের অভিযোগ৷ এর পর রাতেই তাঁরা ঘটনাটি স্থানীয় বিধায়ক রামপ্রাসাদ পালকে অবগত করেন৷ তিনি তখন তাঁদের আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন৷ বিধায়কের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি চলে যান৷ কিন্তু আজ সকালে শ্রমিকরা মোটর স্ট্যান্ডে এসে দেখেন অফিসে কেউ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে৷ খবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, মালিক পক্ষ থেকে তালা দেওয়া হয়েছে৷ ঘটনাটি শুনে তাঁরা ক্ষব্ধ হয়ে ওঠেন৷ তাঁদের বক্তব্য, স্থানীয় বিধায়ক বলেছেন তিনি নিজে বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন৷ এর পরও মালিক পক্ষ তাঁদের নিজের মর্জিমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এর মানে তাঁরা বিধায়ককে অপমান করছেন৷ তাই তাঁরা প্রথমে নাগেরজলা থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন৷ তবে সকালে বেশকিছু যাত্রীকে কয়েকটি গাড়িতে করে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য মোটর স্ট্যান্ডেও বিএমএস-এর সদস্যরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন৷ বিএমএস কর্মীদের দাবি, বর্তমানে সারা রাজ্য জুড়ে যাত্রী পরিষেবা বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা৷ যতক্ষণ পর্যন্ত মালিক পক্ষের এই বর্বরোচিত ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা বন্ধ থাকবে৷ তা না-হলে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করে যাবে৷ এদিকে নাগেরজলা মোটর স্ট্যান্ডে গিয়ে মালিক পক্ষের কোনও প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি৷ তাই এ বিষয়ে তাঁদের মন্তব্য জানা যায়নি৷ তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা যাত্রীদের৷ তাঁদের কেউ যাবেন উদয়পুর, কেউ দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন জায়গায়৷ খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়ার বাসিন্দা ভাস্কর দেব উদয়পুর যাবেন৷ নাগেরজলা এসে শুনেন গাড়ি চলাচল বন্ধ৷ পরে অবশ্য আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়৷ প্রশ্ণ উঠেছে বাম আমলের মত রাম আমলেও সিন্ডিকেট রাজ কায়েম হয়ে আছে মোটরস্ট্যান্ডগুলি৷
শুধু তাই নয় বিভিন্ন মোটরস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ উঠেছে৷ এনিয়ে মোটর শ্রমিকদের মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দিয়েছে৷ রাধানগর মোটরস্ট্যান্ড, চন্দ্রপুর আইএসবিটি এবং নাগেরজলা মোটরস্ট্যান্ডে একাংশ বিএমএস নেতা দাপট খাটিয়ে এই চাঁদাবাজী করছে বলে অভিযোগ৷ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর বাম আমলের ইউনিয়নগুলির কিছু নেতা বিএমএসের পতাকা তলে শামিল হয়েছেন৷ তারাই এই অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ৷ তাতে শ্রমিক স্বার্থ যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি যাত্রীদেরও নিত্যদিন নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ অন্যদিকে শাসক দলেরও ইমেজ অনেকাংশেই খর্ব হচ্ছে৷