নিজস্ব প্রতিনিধ, আগরতলা, ৭ মে৷৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে পুর নিগম৷ শুধু তাই নয়, পুর নিগমের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ দুর্ভাগ্যজনক বলেও তোপ দাগেন মেয়র-ইন কাউন্সিলাররা৷ তাঁরা বিদ্রুপ করে বলেন, রাজ্যের নির্বাচিত প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতার এক্তিয়ার সম্পর্কে জানেন তা মানতে কষ্ট হচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পুর নিগমের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর একটি চিঠি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ ওই চিঠিতে পুর নিগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি ছিল৷ সে-বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন পুর নিগমের মেয়র-ইন কাউন্সিলাররা৷ ফলে, তাঁরা ত্রিপুরা সরকারকে বিঁধতে কোনও কসুর রাখেননি৷ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রসঙ্গে নিগমের তিন মেয়র-ইন কাউন্সিল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷ নিগমের মেয়র-ইন-কাউন্সিল ফুলন ভট্টাচার্যের কথায়, ত্রিপুরার নির্বাচিত প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতার এক্তিয়ার সম্পর্কে জানেন না তা মানতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে৷ সাথে যোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন কোনও চিঠি আমরা পাইনি৷ তবে, যদি মুখ্যমন্ত্রী পুর নিগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে থাকেন তা-হলে কেন তিনি নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কথা বলেছেন তা বুঝতে পারছি না৷
এদিকে, নিগমের মেয়র-ইন কাউন্সিল সমর চক্রবর্তীর কথায়, রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমরা দেখা করতে পারিনি৷ তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন৷ অথচ, আজ পর্যন্ত আমাদের তিনি সময় দেননি৷ তাঁর বক্তব্য, পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বছরে ২/৩ বার বৈঠক হয়েছে পুর নিগমের৷ তাছাড়া, নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই বৈঠক হত৷ কিন্তু, এখন কোনও বৈঠকই হচ্ছে না৷
তিনি বলেন, পুর নিগমের বহু সমস্যা রয়েছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর টুয়েপ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে৷ আগে ৬৫:৩৫ অনুপাতে অর্থ বরাদ্দ হত৷ কিন্তু এখন নীতির পরিবর্তনে ৫০:৫০ অনুপাতে অর্থ বরাদ্দ করছে রাজ্য সরকার৷ ফলে, কাজও কমে গিয়েছে৷ তাছাড়া, শেয়ার অব ট্যাক্সেসও কমে গিয়েছে৷
এ-বিষয়ে এক তথ্য তুলে ধরে মেয়র ড় প্রফুল্লজিৎ সিনহা বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে টুয়েপ প্রকল্পে চতুর্দশ অর্থ কমিশন থেকে পেয়েছি ৩৮ কোটি টাকা৷ কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা কমে পেয়েছি ২১ কোটি টাকা৷ তবে, এ-বছর কী পরিমাণ অর্থ পাব তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না৷ সাথে তিনি আরও জানান, শেয়ার অব ট্যাক্সেস থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রয়োজন ছিল ৪১ কোটি টাকা, পেয়েছি ৩৫ কোটি টাকা৷ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরেও প্রয়োজন ছিল ৪৮ কোটি টাকা, পাওয়া যাবে ৪২ কোটি৷
মেয়র-ইন কাউন্সিল সমর চক্রবর্তী এই তথ্যের ভিত্তিতে বলেন, বহু সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে চাইছি৷ কিন্তু, কোনও সহযোগিতা পাচ্ছিনা৷ তাঁর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ ঠিক তখনই চক্রবর্তীর কথা কেড়ে নিয়ে অপর মেয়র-ইন কাউন্সিল অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর পুর নিগমের সমস্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রাজ্য সরকারকে সব রকম সহযোগিতা করব৷ কিন্তু, আজ অবদি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সাথে কোনও কথা বলেননি৷
তাঁর দাবি, আমরাও পাঁচ বছরের জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি৷ আমাদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক৷ আগরতলা পুর নিগম একটি স্বশাসিত সংস্থা৷ এ-ধরনের হুমকির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷
আজ নিগমের মেয়র-ইন কাউন্সিলাররা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে হঠাৎ যেভাবে মেজাজ হারিয়েছিলেন তাতে মেয়র ড় প্রফুল্লজিৎ সিনহার হস্তক্ষেপ রাজ্য সরকারের সাথে পুর নিগমের সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়তে দেয়নি বলে মনে হয়েছে৷ ড় সিনহার কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও চিঠি পাইনি৷ যদি আসে তা-হলে নিশ্চই উত্তর দেওয়া হবে৷