নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ মার্চ৷৷ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন যতই এগিয়ে আসছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমন্ডল ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে বহুমুখী লড়াই হচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রার্থীরাও প্রচারে জোর দিয়েছেন৷ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে৷ বৃহস্পতিবার ধনপুর এবং মেলাঘরে আক্রান্ত হয়েছে বিরোধী দলের নেতৃত্ব৷
আজ সোনামুড়া জুড়ে স্থানে স্থানে আক্রান্ত হলেন সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতা এবং প্রার্থী৷ ধনপুরে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারকে আক্রমণ করা হয়৷ সভা করতে দেয়া হয়নি৷ এছাড়া, সোনামুড়ার মেলাঘরে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিককে বাধা দিতে গেলে ইন্দিরা নগরে বিজেপির লোকজনের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ তাতে বিজেপির কয়েকজন কর্মী এবং কংগ্রেসের একজন কর্মী অল্পবিস্তর আহত হয়েছে৷ মহকুমার পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বাধীন প্রায় ২৫ জন নিরাপত্তা কর্মীর নীরব দর্শকের ভূমিকার মধ্য দিয়ে ইন্দিরা নগরে টানা ২০ মিনিট যাবত রাজনৈতিক সংঘর্ষ চলতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে একের পর এক নিজের দলের কর্মীরা ঘায়েল হচ্ছে দেখে আক্রান্তকারী বিজেপির কর্মীরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়৷ সেখান থেকে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বৈঠক এবং দলত্যাগ কর্মসূচি শেষ করে সুবল ভৌমিক যখন মেলাঘরে বাজারে আসেন সেখানে আবার ওনার গাড়ির ওপর হামলা চালায় বিজেপির লোকজন৷ সুবল ভৌমিক বলেন, হামলকারীরা সবাই একদা সিপিএমের আগ মার্কা ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী ছিল৷ এখন তারা বিজেপির হারমাদ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে৷ অথচ এলাকার প্রকৃত একজন বিজেপি কর্মীকেও এসব ঘটনায় দেখা যায়নি৷ হামলকারীরা সুবল ভৌমিকের সঙ্গে থাকা কংগ্রেস কর্মীদের একটি গাড়ির কাঁচ ঢিল মেরে ভেঙে দেয়৷ যদিও সেখানে অবশ্য হামলাকারী বিজেপি কর্মীদের হটিয়ে দিতে নিরাপত্তা রক্ষীরা মৃদু লাঠি চার্জ করে৷ এরপর তারা নিরাপদে আগরতলায় ফিরে আসে৷

অন্যদিকে, আজ দুপুরেই ধনপুরে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর হয়ে সভা করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷ তারা মানিকবাবুর উপর হামলা না চালালেও অকথ্য গালাগাল করার পাশাপাশি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় মানিক সরকার এখানে ভাষণ দিতে পারবে না৷ মানিক সরকার যদি ভাষণ দেওয়ার চেষ্টা করে পরিস্থিতি রক্তাক্ত হয়ে যাবে৷ অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা বেচারা হাতজোড় করে মানিক সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি যেন ভাষণ না দিয়েই ফিরে যান৷ এই লজ্জাজনক ঘটনাটি ঘটেছে আনন্দপুর এলাকায়৷ অন্যদিকে, জেলা বিজেপির নেতারা এটাকে গণরোষ বলে আখ্যায়িত করেন৷ তাদের দাবি এলাকার জনগণ চায় না মানিক সরকার এই এলাকায় যান৷ এর আগে অবশ্য তিনি তৈবান্দালে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সভায় ভাষণ দেন৷ সেখানেও এরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে আনন্দপুরে৷ বিরোধী দলনেতার মত সংসদীয় নেতাদের প্রকাশ্যে হেনস্থার ঘটনা কার্যত রাজ্য রাজনীতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়৷ অন্যদিকে, সিপিএম দল দাবি করেছে তাদের দলীয় প্রার্থী শংকর দত্তকে আজ শহরের অরুন্ধতীনগর, আমতলী বাধারঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রচার করতে গেলে বিজেপির কর্মীরা বাধা দেয়৷ শেষ পর্যন্ত ভোট প্রচার না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন প্রার্থী শংকর দত্ত৷ এভাবে ভোট প্রচারেপ্রার্থীদের বাধা দেওয়ার নেতাদের ওপর আক্রমণ এবং হেনস্থার ঘটনা রাজ্য রাজনীতির জন্য নতুন সংযোজন বলা যায়৷
অন্যদিকে, সিপিএম প্রার্থী গত সাতদিনে অত্যন্ত ১০-১১টি স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ঠিকভাবে জমিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলেও আজ প্রথম দিনেই কংগ্রেস প্রার্থীর ওপর হামলা করলে কংগ্রেস কর্মীরা তাদের সাধ্যমতো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে৷ স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ সংঘর্ষের রূপ নেয়৷ এমনকি এই বাধাদানের প্রতিবাদে রাত আটটা নাগাদ রাজধানীতে কংগ্রেস কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে৷ জঙ্গি বিক্ষোভ মিছিল শেষে কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা রাত নয়টা নাগাদ সদর এসডিপিও দপ্তরের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়৷ আগামীকাল সারা রাজ্যে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে কংগ্রেস বিক্ষোভ মিছিল করবে৷ অর্থাৎ যেখানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস৷
রাতে সোনামুড়া থেকে ফিরে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে সুবল ভৌমিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমাদের বাধা দিলে আমরা ভোট প্রচার ফেলে ফিরে আসব না৷ প্রতিরোধ গড়ে তুলব যা হওয়ার হবে৷ আমরা কোনমতেই সংঘর্ষ চাই না৷ আমরা চাই নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট প্রচার৷ বর্তমানে পুরো প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চলে৷ এই ক্ষেত্রে ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও’র ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয় বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ সুবলবাবুর অভিযোগ, দেশের কোথাও এভাবে ভোটপ্রার্থীরা যেখানে যাচেছন সেখানে হয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন নয়তো বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন৷ এটা গণতন্ত্রের পক্ষে যেমন লজ্জার তেমনই নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েও স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ণ উঠতে পারে৷ তাই তিনি আশা করেন যতটা হয়েছে আর যাতে প্রার্থীরা কোনভাবেই আক্রান্ত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য নির্বাচন দপ্তরকে৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র হরেকৃষ্ণ ভৌমিক সরাসরি অভিযোগ করেন রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনায় উস্কানিদাতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷ তিনি সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, এতেই বোঝা যাচ্ছে তিনি কিভাবে উস্কানি দিচ্ছেন নিজের দলের কর্মীদের৷ তাছাড়া ভোটের নামে প্রহসন করতে পুলিশ এবং প্রশাসনকেও ব্যবহার করতে পারে বিপ্লব দেব৷