BRAKING NEWS

লখনউতে প্রকাশ্য রাস্তায় দু’জন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীকে প্রহার, ধৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪

লখনউ, ৭ মার্চ (হি.স.): আবারও নিগ্রহের শিকার হলেন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা| এবার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ-এর রাস্তায় দু’জন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীকে আক্রমণ ও মারধরের অভিযোগ উঠল ডানপন্থী সংগঠনের কয়েকজন সদস্যদের বিরুদ্ধে| সেই মারধরের ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করেন ওই স্থানে উপস্থিত একজন ‘সতর্ক নাগররিক’| তিনিই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন| নক্ক্যারজনক এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়| পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবারই চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ| ধৃতদের নাম হল, বিশ্ব হিন্দু দল-এর প্রেসিডেন্ট বজরং সোনকার (বজরং নিজেকে বিশ্ব হিন্দু দল-এর প্রেসিডেন্ট দাবি করেছে), হিমাংশু গর্গ, অনিরুদ্ধ এবং অমর কুমার| ধৃতদের বিরুদ্ধে হাসানগজ থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ৩০৭ এবং ফৌজদারী আইনে (সংশোধনী) এফআইআর রুজু করা হয়েছে| বুধবার বিকেলে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছিল মধ্য লখনউয়ের ব্যস্ততম দালিগঞ্জ এলাকায়|

গত ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১০টি রাজ্যকে কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট| প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকার এবং ১০টি রাজ্যকে কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নোটিস জারি করেছিল| সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছিল, গত ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কাশ্মীরিদের উপর নতুন করে হামলা হয়নি| সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের স্বীকারোক্তির পরও কাশ্মীরিদের উপর নিগ্রহের ঘটনা যেন বন্ধ হওয়ার নামই নিচ্ছে না|

প্রতিবছর শীতের সময় কাশ্মীর থেকে লখনউতে ব্যবসা করতে আসতেন জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগাম জেলার বাসিন্দা আব্দুল এবং আফজল| লখনউয়ে ফল বিক্রিই তাঁদের পেশা| বুধবার বিকেলেও মধ্য লখনউয়ের দালিগঞ্জ এলাকায় দালিগঞ্জ ব্রিজের কাছে ফল বিক্রি করছিলেন আব্দুল এবং আফজল| আচমকাই প্রকাশ্য রাস্তায় ডানপন্থী সংগঠনের সদস্যদের হাতে নিগ্রহের শিকার হন এই দু’জন কাশ্মীরি ব্যবসায়ী| লাঠি দিয়ে তাঁদের মারধরও করা হয়| সেই সময় একজন ‘সতর্ক নাগরিক’ মারধরের ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেন| ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মাত্রই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়| ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, গেরুয়া কুর্তা পরিহিত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি দু’জন কাশ্মীরিকে বেধড়ক মারধর করছেন| মারধরের ঘটনা দেখে স্থানীয়রাই ওই দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেন| এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ| সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসএসপি) কালিন্ধী নৈথিনি জানিয়েছেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দালিগঞ্জ ব্রিজের কাছে ফল বিক্রি করছিলেন দু’জন কাশ্মীরি ফল বিক্রেতা| পাথর নিক্ষেপকারী আখ্যা দিয়ে তাঁদের মারধর ও কটূক্তি করা হয়| স্থানীয়দের তত্পরতায় কাশ্মীরি বিক্রেতাদের উদ্ধার করা হয়| এই ঘটনায় বজরং সোনকার নামে একজন অভিযুক্তকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়| কুখ্যাত অপরাধী সোনকারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা-সহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে| বজরং সোনকারকে জেরা করার পর আরও তিনজন অভিযুক্তের সম্পর্কে জানা যায়| পরে ওই তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়|’ বাকি অভিযুক্তদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন এসএসপি|

উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) জঙ্গিদের ফিদায়েঁ হামলার পরই থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল গোটা দেশবাসী| দেশবাসী এতটাই ক্ষুব্ধ যে, ভারতের কোনও কোনও রাজ্যে গত ১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আক্রান্ত হয়েছেন কাশ্মীরিরা, আক্রান্ত হয়েছেন কাশ্মীরি ছাত্ররাও| কোথাও হামলা, কোথাও আবার কটূক্তির শিকার হতে হয়েছিল কাশ্মীরিদের| ওই ধরনের পরিস্থিতি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও ১০টি রাজ্যকে নোটিশ পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট| তা সত্ত্বেও কাশ্মীরিদের উপর হামলার ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *