বাসুদেব ধর (ঢাকা), ১৮ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : বিজ্ঞানী, লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডের চার বছর পর চার্জশিট জমা পড়েছে। রবিবার আদালতের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সোমবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ। জঙ্গি গ্রুপের অনলাইন তৎপরতার ওপর নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এরকম একটি ওয়েবসাইট ‘সাইট’ এই খবর দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আরও কিছু হত্যাকান্ডেরও দায়িত্ব নিয়েছে এই আল কায়দা।
চার্জশিট প্রদানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে অভিজিৎ রায়ের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অজয় রায় এদিন বলেন, \”শেষ পর্যন্ত চার্জশিট হল। চারটে বছর প্রলম্বিত হওয়ার পর চার্জশিট হয়েছে। বিচার শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারব কিনা জানি না।\” মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ দেশে আসেন। ওই বার একুশে বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি মেলা থেকে ফেরার সময় রাত সাড়ে ৮টায় টিএসসি চত্বরের সামনে স্ত্রী বন্যা আহমেদসহ হামলার শিকার হন অভিজিৎ। হামলায় অভিজিৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চাপাতির আঘাতে বন্যার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যাকে মার্কিন দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্যে। পরবর্তী সময়ে অভিজিৎ রায়ের বইয়ের দুই প্রকাশকের ওপরও হামলা চালায় জঙ্গিরা।
এক প্রকাশক নিহত হন। অন্য প্রকাশক গুরুতর আহত হয়েছিলেন। অভিজিৎ বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন তিনি। অভিজিৎ পেশায় প্রকৌশলী। সেই হত্যাকান্ডের চার বছর পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এই হত্যাকান্ডে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ মোট ১১ জন জড়িত। সব তথ্য মিলিয়ে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, যে এ ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়া। যার নেতৃত্বে মোট ১১ জন এ ঘটনা সংঘটিত করেছে। মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সবার নাম ঠিকানা আমরা পাইনি। ছয় জনের পাওয়া গেছে ও এই ছয় জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছি।
গ্রেফতার হওয়া তিন আসামী মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান শামস ও আবু সিদ্দিক সোহেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। অন্য কারা জড়িত, কিভাবে ঘটনা হয়েছে, কেন হয়েছে সব তারা বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, এর আগে র্যাবের হাতে আটক শফিউর রহমান ফারাবীর বিরুদ্ধে এ ঘটনার প্ররোচনার অভিযোগ মিলেছে ও ফারাবী ফেসবুক ও অন্য জায়গায় অভিজিৎ রায় হত্যার জন্য উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছে। বাকি দুজন অর্থাৎ মেজর জিয়া এবং আরেকজন আকরাম, যাদের এখনও আটক করা হয়নি।