ঢাকা, ২১ জানুয়ারি (হি.স.): সৌদি আরব আরও ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছে। রবিবার রাতে তাদের বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার যে কোনও সময় তাদের নিয়ে বিমান উড়তে পারে ঢাকার উদ্দেশে। এ মাসে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশে পৌঁছনোর পর এই রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের প্রচারণা সমন্বয়কারী নায় সান লুইন জানান, সৌদি আরবে প্রায় ৩ লক্ষ রোহিঙ্গা বাস করছে। তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার আশঙ্কা বাংলাদেশে পৌঁছনোর পরপরই কারাগারে পাঠানো হবে ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের। সান লুইন বলেন, রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগেরই বসবাসের অনুমতি রয়েছে এবং সৌদি আরবে বৈধভাবে বাস করতে পারে। কিন্তু জেদ্দার শুমাইসি কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে অন্য রোহিঙ্গার মতো আচরণ করা হয়নি। অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।
এই অ্যাক্টিভিস্ট জানান, অনেক রোহিঙ্গাই ভুয়ো কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের মতো দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। যখন এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পৌঁছবে তাদের কারাগারে পাঠানো হতে পারে। সৌদি আরবের উচিত এই প্রত্যর্পণ বন্ধ করে তাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া। যেমনটা এদের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় ১৯৮২ সালে। এর ফলে রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাসবাসকারী রোহিঙ্গারা দেশহীন হয়ে পড়েছে। মায়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে এ দেশের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তারা শিক্ষা, কাজ, ভ্রমণ, বিয়ে, ভোট, ধর্ম পালন ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ২০১১ সালের পর যে সব রোহিঙ্গা সৌদি আরব প্রবেশ করেছেন তাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া বাতিল করা হয়েছে। সান লুইন জানান, বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন গত দুই বছর ধরে সৌদি আরবের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের এই রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রিয়াদ সফরের পর সৌদি আরব রোহিঙ্গা বন্দিদের ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে। কোনও অভিযোগ ছাড়াই সৌদি আরবে বেশ কয়েক বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের। এদের বেশিরভাগ ২০১১ সালের পর মায়ানমারের নিপীড়ন এড়াতে ও জীবিকার তাগিদে তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে পৌঁছয় ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে ১৩ রোহিঙ্গাকে। ওই দিন রাত দুটো’র সময় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০২ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়। পরে তাদেরকে ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়।