নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানুয়ারি ৷৷ পুলিশ প্রশাসনকে সরকারের মুখ হতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, সাধারণ জনগণ পুলিশী ব্যবস্থাকেই সরকার মনে করে৷ তাই, পুলিশ প্রশাসনকেও জনগণের কাছে যোগ্যতার ছাপ রাখতে হবে৷
বৃহস্পতিবার অরুন্ধতীনগর স্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্যারেড ও কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে৷ পুলিশের সঙ্গে জনগণের সুসম্পর্ক স্থাপিত হলেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুন্দর ও সঠিক দিশায় পরিচালিত হবে৷ এদিন প্যারেড ও

কুচকাওয়াজে আরক্ষা প্রশাসনের মোট ১০টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করেছে৷ এরমধ্যে রয়েছে টিএসআর, ট্রাফিক পুলিশ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ, মহিলা পুলিশ এবং হোমগার্ডের জওয়ানগণ৷ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের উদ্দেশ্যে পুলিশ বাহিনী গ্রামে গঞ্জে, পাহাড় সমতলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ পাশাপাশি রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার যে সংকল্প নিয়েছে তা বাস্তবায়নেও রাজ্যের প্রতিটি থানা, জেলা এবং সদর পুলিশ সাফল্যের সাথে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, আমরা স্মার্ট পুলিশ প্রশাসন চাই৷ ইতিমধ্যে রাজ্যের গর্ব টিএসআর বাহিনীর পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এই পোশাক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে মানসিকতারও পরিবর্তন হয়েছে৷ ফলে তারা এখন নতুন দিশায় নতুন ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বচ্ছ ভারত গড়ে তুলতে চাইছেন৷ এরই অঙ্গ হিসাবে আমাদের রাজ্যেও বিভিন্ন স্থানে স্বচ্ছ ভারত অভিযান সংগঠিত করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতিটি থানাকে স্বচ্ছ রাখার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক রয়েছে৷ আর সেটা দেখলেই বোঝা যায় রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে৷ ত্রিপুরাকে নারী নির্যাতনমুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্য সরকারও মহিলা সশক্তিকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি থানা এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে রাজ্য সরকার পুনরায় বীট কনস্টেবল ব্যবস্থা চালু করেছে৷ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন থেকে প্রতিটি থানা এলাকায় টহলদারী চলবে৷ অপরাধ হ্রাসের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷ পাশাপাশি প্রতিটি থানাকে প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর তাদের কাজকর্মের পর্যালোচনা করার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে সরকারের মুখ হতে হবে৷ কারণ সাধারণ জনগণ পুলিশী ব্যবস্থাকেই সরকার মনে করে৷ আগামীদিনে রাজ্য সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেবে সেগুলি বাস্তবায়নে ত্রিপুরা পুলিশ সুসংহতভাবে কাজ করলে তিন বছরের মধ্যে রাজ্যকে মডেল রাজ্যে পরিণত করা সম্ভব৷
অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক এ কে শুক্লা বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে রাজ্যে পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে৷ জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন৷ ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত ও নারী নির্যাতনমুক্ত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজ্য পুলিশবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্ব সহকারে কাজ করে চলছে৷ পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসাবে এবং মহকুমায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা, সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পুলিশ ম্যান অব দ্যা ইয়ার, ২০১৮ পুরস্কার প্রদান করা হয় বিশালগড় মহকুমার এসডিপি ও মিহির লাল দাসকে৷ থানা এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অপরাধ দমন, পুলিশ কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ থানা, ২০১৮ এর সম্মান লাভ করে কৈলাসহর থানা৷ মামলার তদন্তের কাজে নিপূণতা প্রদর্শন করায় শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক হিসাবে সম্মান লাভ করেন ইন্সপেক্টর শোভা রানী তেলি৷ এছাড়াও শ্রেষ্ঠ টিএসআর ব্যাটেলিয়ন ২০১৮ এর স্বীকৃতি পায় ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ান৷ প্রয়াসের মাধ্যমে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ দমন এবং নেশাবিরোধী অভিযান সফলভাবে সংগঠিত করার জন্য শ্রেষ্ঠ জেলার সম্মান লাভ করে খোয়াই জেলা৷ সম্মান প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতি মোহন দাস, মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব কুমার অলক এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা পুলিশের উদ্যোগে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিবর্গ রক্তদান শিবির পরিদর্শন করেন এবং রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন৷