নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ ডিসেম্বর৷৷ সর্ষের মধ্যেই কি ভূত লুকিয়ে রয়েছে? সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর সংগ্রহে গিয়ে এমনটাই অভিজ্ঞতা হয়েছে সাংবাদিকদের৷ সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে খবর রেকর্ড নিয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন সমবায় সচিব বরুণ কুমার সাহু৷ গোপনীয়তার প্রশ্ণে তিনি এতটাই উত্তেজিত হয়ে উঠেন যে সাংবাদিকদের অপমান করতেও দ্বিধা বোধ করেননি৷ সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানতে গেলে সংবাদিকদের অপমান করেই ক্ষান্ত হননি, বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজও করেন প্রধান সচিব বরুণ কুমার সাহু৷ তাতে মনে হয়েছে, এই আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রকৃত ঘটনা রেকর্ড হলে শ্রীসাহু হয়তো বেকায়দায় পড়ে যেতেন৷ হয়তো বা ওই প্রমাণ তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো, তাই তিনি সাংবাদিকদের অপমান করে নিজ অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন৷ তবে, তাঁর এই আচরণে বিস্মিত হন মুখ্য সচিব এল কে গুপ্তা৷ কারণ, সাংবাদিকদের সাথে শ্রীসাহুর দূর্ব্যবহারের বিষয়টি মুখ্য সচিবের গোচরে নেওয়া হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷
প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের দুটি গ্রামীণ শাখা থেকে ৯২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে৷ অমরপুর মহকুমার নতুনবাজার এবং জম্পুইজলায় সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ৯২ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে৷ প্রকাশিত সংবাদে দাবি, গত শনিবার সমবায় ব্যাঙ্কের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রসঙ্গটি উঠেছিল৷ নতুনবাজার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্চালক দিব্যেন্দু দেবনাথ এবং জম্পুইজলা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্চালক নীলোৎপল দেববর্মা লক্ষ লক্ষ টাকা তছরূপ করেছেন৷ এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসতেই দুজনকেই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ উভয় শাখায় আর্থিক তছরূপের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷
জানা গেছে, সমবায় ব্যাঙ্কের জম্পুইজলা শাখা থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকা এবং নতুনবাজার শাখা থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা গায়েব করা হয়েছে৷ প্রশ্ণ উঠেছে, এত বড় জালিয়াতি দীর্ঘ সময় ধরে কারোর নজর কিভাবে এড়িয়ে গেল৷ গত ৩০ অক্টোবর সমবায় ব্যাঙ্কের পুরাতন পরিচালন বোর্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে৷ এরপর থেকে নতুন পরিচালন বোর্ড দায়িত্ব সামলাচ্ছে৷ এই জালিয়াতির জন্য সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডকে সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখা যায় না৷ কিন্তু প্রশ্ণ হল, কখন থেকে এই জালিয়াতি শুরু হয়েছে৷
নতুন সরকারের মেয়াদকালে নতুন ও পুরাতন বোর্ড সমবায় ব্যাঙ্ক পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে৷ সম্প্রতি নাবার্ড রাজ্যে মোট পাঁচটি ব্যাঙ্কে আর্থিক অনিয়মের রিপোর্ট দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, এই রিপোর্ট অনেক আগেই পেয়েছিলেন সমবায় দপ্তরের প্রধান সচিব বরুণ কুমার সাহু৷ অথচ, গত শনিবার বার্ষিক সাধারণ সভায় এনিয়ে চর্চা হয়েছে৷ নাবার্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগেই কেন আর্থিক তছরূপের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেই প্রশ্ণ উঠেছে৷
এক্ষেত্রে সমবায় ব্যাঙ্কের পুরাতন পরিচালন বোর্ড নাবার্ডের রিপোর্ট চেপে যাওয়ার পেছনে মূল কারিগর ছিল কিনা সেই প্রশ্ণ সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই মনে করা হচ্ছে৷ প্রধান সচিব বরুণ কুমার সাহু দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ পদে রয়েছেন৷ স্বাভাবিকভাবে তাঁর পরিচিতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে কারোরই সন্দেহ থাকার কথা নয়৷ সেই ক্ষমতা বলেই কি দীর্ঘ সময় ধরে সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক নয়ছয় নিয়ে নাবার্ডের রিপোর্ট তিনি চেপে গিয়েছেন কিনা, সেই প্রশ্ণ উঠা স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে৷
এদিন, সমবায় ব্যাঙ্কে ৯২ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকরা চরম অপমানিত হওয়ার ঘটনা প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্য বলেই মনে করা হচ্ছে৷ সমবায় সচিব বরুণ কুমার সাহুর কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের অপমান করে তাঁর অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন৷
রাজ্যে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির এত বড় ঘটনা ঘটে গেছে৷ অথচ সমবায় সচিব বরুণ কুমার সাহু এবিষয়ে কিছুই জানেন না, এমনটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন৷ কারণ, সোমবার সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিকরা তাঁর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু, তাঁর অফিস কক্ষে উপস্থিত সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত ভট্টাচার্য মনে করিয়ে দেন জালিয়াতির প্রসঙ্গটি৷ এবিষয়ে তাঁর বক্তব্য সাংবাদিকরা রেকর্ড করতে চাইলেই তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন৷ তিনি তখন উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁর অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন৷ সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্যের প্রমাণ থাকুক তা তিনি চাইছিলেন না হয়তো৷ তাতেই সন্দেহ আরো বেড়েছে, ওই জালিয়াতির সাথে তিনিও যুক্ত কিনা৷ নয়তো, এমনভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠার কারণ খঁুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷
বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তাকে জানানো হলে তিনি সমবায় দপ্তরের প্রধান সচিবের আচরণে দুঃখ প্রকাশ করেন৷ প্রধান সচিব বরুণ কুমার সাহুর আচরণে বিস্মিত মুখ্য সচিব এল কে গুপ্তা সাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন৷ মুখ্য সচিবের কথায়, সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণ কখনোই কাম্য নয়৷ প্রশাসন ও সংবাদ মাধ্যমের নিবিড় সম্পর্কই কাম্য৷
2018-12-18

