অ্যাডিলেড, ৬ ডিসেম্বর (হি.স.) : ওভালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান করল৷ গোটা দিন ভাল খেলে এসেও শেষটা সত্যিই সুখকর করতে পারলেন না চেতেশ্বর পূজারা৷ পূজারার লড়াকু শতরান, ইনিংসের ভিত গড়ে দেওয়া, একার কাঁধে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া৷ মিডল অর্ডারের ব্যাটিং স্তম্ভের থেকে যা যা প্রত্যাশা ছিল সবটাই করলেন৷ ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে পূজারার দুরন্ত শতরানে ভর করে দিনের শেষে আড়াইশোতে পৌঁছায় ভারত৷ কিন্তু দিনের শেষের একটা ভুলই হিরো থেকে ভিলেন বানিয়ে দিল পূজারাকে৷
দিনের একেবারে শেষ মুহূর্তে ৮৮ তম ওভারের পঞ্চম বলে এক রান নেওয়ার তাড়াহুড়ো করেন পূজারা৷ লক্ষ্য অবশ্যই শামিকে নট স্ট্রাইকার রাখা৷ অর্থ্যাৎ চাপটা নিজের কাঁধে রেখেই উইকেট বাঁচিয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন৷ প্যাট কামিন্সের থ্রোয়ের সামনে শেষটায় হারতে হয়৷ তার আগের ওভারে স্টার্ককে একটি ছক্কা হাঁকানোর পরই মনসংযোগের অভাবটা ধরা পড়েছিল৷ ছক্কাটা নিঁখুত হলেও পরের বলেই খোঁচা খেতে খেতে বেঁচেছিলেন পূজারা৷ শেষবেলায় ক্ষমাহীন এই ভুল করে রান আউট না পেলে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন অ্যাডভান্টেজ নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ ছিল ভারতের সামনে৷ প্রথম দিন শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ভারতের ঝুলিতে ২৫০ রান৷ আর পূজারার নামের পাশে ১২৩রান৷ অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সুবর্ণ সুযোগ হারালেন চেতেশ্বর৷
এদিন অ্যাডিলেডে টসে জিতে ব্যাটিং নেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও বেরিয়ে আসে ভারতের ব্যাটিংয়ের কঙ্কালসার অবস্থা। বাজে শট সিলেকশনের খেসারত দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই ধুঁকতে থাকে ভারত। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই অফ-স্টাম্পের বাইরের বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে থার্ড স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কেএল রাহুল। তারপর ক্রিজ়ে আসেন চেতেশ্বর পূজারা। দলীয় ১৫ রানের মাথায় ফের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন মুরলি বিজয়। একই ভুলের খেসারত দেন বিরাট। প্যাট কামিন্সের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ভারতীয় অধিনায়ক। নিজের বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন উসমান খোয়াজা। প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন কোহলি৷ এই অ্যাডিলেডে দারুণ সব ইনিংস রয়েছে বিরাটের৷ শেষবার অজি সফরে এই মাঠে দুই ইনিংসে দুটি শতরান(২০১৪)৷ সেবার প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ছিল ১১৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল ১৪১ রান৷ কিন্তু এদিন মাত্র তিনরানেই ফেরেন বিরাট। তারপর ক্রিজ়ে আসেন অজিঙ্কা রাহানে। চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে ইতিবাচক খেলতে থাকেন তিনি। কিন্তু, পার্টনারশিপ জমাট হওয়ার মুখেই অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রাহানে। তখন ভারতের স্কোর ৪ উইকেটে ৪০ রান।
ভারতের টালমাটাল ইনিংসের হাল ধরেন রোহিত শর্মা। লাঞ্চের সময় ভারতের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৫৬ রান। কিন্তু, ক্রিজ়ে যখন জমাট হয়ে যান রোহিত, তখন নাথান লিঁয়র বলে স্টেপ আউট করে ছয় মারতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন রোহিত। ৩৭ রানে রোহিত ফেরার পর ঋষভ পন্থের সঙ্গে লড়াই চালাতে থাকেন পূজারা। কিন্তু, ভারতের ১২৭ রানের মাথায় লিঁয়র বলে টিম পেইনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পন্থ। ৩৮ বলে ২৫ রান করেন তিনি। এরপর ভারতীয় ইনিংসের ধস রুখে দেন পূজারা ও অশ্বিন। পূজারা একদিকে ইনিংসের হাল ধরে থাকলেও বাকি ব্যাটসম্যানদের জঘন্য শট সিলেকশনের ফল ভুগতে হচ্ছে ভারতকে। শেষপর্যন্ত ১২৩ রানে আউট হন তিনি। পরের ওভারে নিজের কাছে স্ট্রাইক রাখবেন বলে রান নিতে গিয়ে আউট হন পূজারা। দিনের শেষে ভারতের স্কোর ২৫০/৯। ক্রিজে রয়েছেন মহম্মদ শামি (৬)।