নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ আগস্ট ৷৷ মাছ উৎপাদনে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে লক্ষ্য স্থির করে কাজ করতে হবে৷ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য
সমস্ত ব্লকগুলির আধিকারিকদেরও লক্ষ্য স্থির করে দিতে হবে৷ আজ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মৎস্য দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার মাছ চাষের উপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে৷ এই মাছ চাষের মাধ্যমেই রাজ্যের গরিবদের রোজগারের ব্যবস্থা হবে৷ তিনি দপ্তরের আধিকারিকদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে পরিকল্পনা রূপায়ণে গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দিয়েছেন৷ সঠিক মানসিকতা নিয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাজ করতেও তিনি আহ্বান জানান৷ পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য দপ্তরের বিভিন্ন কার্যাবলীর পর্যালোচনা করেন৷ সভায় দপ্তরের সচিব রামেশ্বর দাস জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে মাছের চাহিদার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৩৪টি সরকারি এবং বেসরকারি হ্যাচারি, ৯টি সরকারি ফার্ম ও ২৮টি ল্যাবরেটরি রয়েছে৷ তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে রাজ্যে মাথাপিছু ১৮৯১ কেজি মাছ উৎপাদন হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মানুষের মাছের চাহিদার সাথে সাযুজ্য রেখে মাছ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে, যাতে বহিঃরাজ্য থেকে মাছ আমদানি করতে না হয়৷ রাজ্যে মাছের উৎপাদনের মাধ্যমেই রাজ্যবাসীর চাহিদা মেটানোর উপর গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি ডুম্বুর জলাশয় থেকে মাছ আগরতলায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ সভায় দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যে বর্তমানে জলাশয়ের এলাকা ৩৪৪১৬৯৪ হেক্টর৷ তিনি জানান, রাজ্য এখন মাছের পোনা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়েটকটি ব্লক পিছিয়ে রয়েছে বলে সচিব সভায় জানান৷ এই ব্লকগুলি হল কদমতলা, যুবরাজনগর, দশদা, লালজুরি, জম্পুইহিল, পানিসাগর, দামছড়া, পেঁচারথল, গঙ্গানগর, ডুম্বুরনগর ও রইস্যাবাড়ি৷ মুখ্যমন্ত্রী রইস্যাবাড়ি এলাকায় মাছচাষে উৎসাহী চাষীদের চিহ্ণিত করে তাদের মৎস্যচাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পরবর্তী পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মৎস্যচাষীদের হ্যাচারি স্থাপন করে দিতেও বলেছেন তিনি৷ সভায় দপ্তরের সচিব ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের অ্যাকশন প্ল্যান তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মৎস্যচাষীদের মধ্যে ৪৭০০০ চিংড়ি, ৮০,০০০ পাবদা, ১২,০০০ মাগুর ও ৬,০০০ চিতলের পোনা বিতরণ করা হয়েছে৷ এছাড়া ৩২৭ জন নির্দিষ্ট মৎস্যচাষীদের প্রত্যেককে ১,৬৪০টি করে মাছের পোনা দেওয়া হয়েছে৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৩৭ লক্ষ মাছের পোনা মৎস্যচাষীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, ডুম্বুর জলাশয় সহ রাজ্যের দু’টি নদীতে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে৷ এছাড়াও দপ্তরের মাধ্যমে মৎস্যচাষীদের মৎস্যখাদ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করা হচ্ছে৷
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাছের খাদ্য বহিঃরাজ্য থেকে আনতে গিয়ে একটা বড় অংশের টাকা রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ এদিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্যের মধ্যেই মাছের খাদ্য উৎপাদনের জন্য খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে দপ্তরকে পরিকল্পনা নিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি রাজ্যের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে যে সকল জলাশয় ও ছড়া রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে মাছের উৎপাদন কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও পরিকল্পনা নিতে তিনি দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ মৎস্যচাষ বিষয়ক যে সকল কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু রয়েছে সেগুলোকে ভিত্তি করে রাজ্যে সুফল পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি করতেও তিনি দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ সরকারিভাবে যে সমস্ত মৎস্যচাষীদের মাছের পোনা বিতরণ করা হয় তা সঠিকভাবে বিতরণ করা হচ্ছে কিনা তার তদারকি করতে মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন কি করে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়েও দপ্তরকে পরিকল্পনা নিতে বলেছেন তিনি৷ এছাড়াও রাজ্যে জৈব মাছ উৎপাদনের জন্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধা্যন সচিব এল কে গুপ্তা, মৎস্য দপ্তরের সচিব রামেশ্বর দাস এবং দপ্তরের অধিকর্তা সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিগণ উপস্থিত ছিলেন৷