ব্যাঙ্ক জালিয়াতি : কিংপিনদের খোঁজে দিল্লি গেল কলকাতা পুলিশ

কলকাতা, ৩ আগস্ট, (হি.স.): ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় কিংপিনদের খোঁজে এবার দিল্লি গেল কলকাতা পুলিশের একটি দল । উপনগরপাল সাইবার অপরাধ সন্তোষ পান্ডের নেতৃত্বে যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করা হয়েছে, সেই সিটই দিল্লিতে পাড়ি দিয়েছে । এরই মধ্যে পাঞ্জাব ন্যাশনল ব্যাঙ্কের মল্লিকবাজার শাখার ১২ জন ব্যাঙ্কের কর্মী এই প্রতারণার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু ব্যাঙ্কের আধিকারিকও । ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে পার্কস্ট্রীট থানাতে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । পিএনবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে ৩১ জন প্রতারণার শিকার হয়েছে তাঁদের টাকা শুক্রবারের মধ্যেই অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে ।

কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দিল্লির কোনও চক্র এই ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সংগঠিতভাবে প্রতারণার ছক কষা হয় । চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বিভিন্ন এটিএমে স্কিমার লাগিয়ে শুরু হয় গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ । টাকা তোলা শুরু হয় জুলাই মাসে । সবথেকে বেশি টাকা তোলা হয় ২৮ ও ২৯ জুলাই । ২৮ তারিখ ছিল চতুর্থ শনিবার এবং ২৯ তারিখ রবিবার । ওই ২ দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার সুযোগ নেয় জালিয়াতরা । গোটা অপরাধ দিল্লি থেকে সংগঠিত হয়েছে বলে অনুমান করছে সিট । কলকাতার বিভিন্ন এটিএমের সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে দিল্লির এটিএমের ফুটেজ মিলিয়ে দেখে অপরাধীকে সনাক্ত করার কাজ করবে সিট ।

গত মঙ্গলবার সামনে আসে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা । দেখা যায়, শহর জুড়ে বহু মানুষ এই জালিয়াতির শিকার । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দিল্লির বিভিন্ন এটিএম থেকে এই টাকা তোলা হয়েছে । এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরবাসীর মনে । প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত টাকা লোপাট হয়েছে অন লাইনেই । চার মাসে চার বার স্কিমার ও ক্যামেরা বসিয়েছিল দুষ্কৃতীরা । হ্যাকাররা মূলত স্কিমার লাগিয়ে চুরি করেছে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য । তারপর সেই তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে নকল এটিএম কার্ড । এটিএমে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা গেছে, গোলপার্কের কাছে প্রথম এটিএমটিতে ৪ এপ্রিল স্কিমার বসানো হয় । এরপর ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪ বার ওই এটিএমে হানা দেয় হ্যাকাররা ।

গোয়েন্দারা এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছেন, গড়িয়াহাটের কানাড়া ব্যাঙ্কের পাশে যে এটিএম কাউন্টারটি রয়েছে, তাতে গত এপ্রিলে এক যুবক দু’বার আসেন । তিনি এটিএমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন । সেদিনই এটিএমে স্কিমার লাগানো হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে । ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খুলে নেওয়া হয় স্কিমার । ওই দু’দিনে কপি করে নেওয়া হয়েছে যাবতীয় তথ্য । তথ্য ব্যবহার করে ডুপ্লিকেট মাস্টার কার্ড বানানো হয় । সেই কার্ড ব্যবহার করেই টাকা তোলা হয়েছে । ফরেনসিক টিম এটিএমের গায়ে আঠার চিহ্ণ পেয়েছে । সেই দু’দিনে কারা টাকা তুলেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ । গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে এসেছে, ওই এটিএমে কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকার কারণেই সাইবার প্রতারক অবাধে এটিএমের ভেতর ঢুকে তার কাজ করেছে । ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির শিকার বহু মানুষ । এটিএম স্কিমিং করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা । এটিএমকে মূল হাতিয়ার করেই সম্ভবত শহর জুড়ে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির রমরমা । থাকতে পারে আরও একাধিক কারণ । বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কানাডা ব্যাঙ্কের গোলপার্ক শাখার এটিএমটি বন্ধ করে দেওয়া হয় । শহরের প্রায় ১০০টি এটিএম পরীক্ষা করা হচ্ছে । দেখা হচ্ছে, এই এটিএম গুলোতে কোনওরকম স্কিমার লাগানো আছে কি না ।

বুধবারই কলকাতা পুলিশের অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি সাংবাদিক বৈঠক করে শহরবাসীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৭৬টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে শহরে । কেউ আতঙ্কিত হবেন না । পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে । তৈরি করা হয়েছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম । আমরা দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি । আশা করছি, দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে’ । তদন্ত চলার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ জালিয়াতির শিকার সমস্ত গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, যাঁদের টাকা গায়েব হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই টাকা ফেরত পাবেন ।