নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুলাই৷৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সভাপতিত্বে আজ মহাকরণের ১নং কনফারেন্স হলে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির ট্রাস্ট বোর্ডের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের সার্বিক উন্নয়নে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির ট্রাস্ট সহ রাজ্য প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা নেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ মাতাবাড়ী মন্দির উন্নয়নে সকলকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আসন্ন দীপাবলি উৎসবে ভারতের বিখ্যাত মন্দির কেদারনাথ, বদ্রিনাথ প্রভৃতি থেকে সাধু-সন্তদের এনে মন্দির প্রাঙ্গণে মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হবে৷ এই মহাযজ্ঞে ভারতবর্ষসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশিষ্টজনদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে৷
সভায় গোমতী জেলার জেলাশাসক তুষারকান্তি দেবনাথ জানান, মোট ১৭৭৭ একর এলাকা নিয়ে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির গড়ে উঠেছে৷ ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের অধীন মেসার্স ইঞ্জিনীয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে মাতাবাড়ীর সার্বিক উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ সহযোগিতায় থাকবে ত্রিপুরা পর্যটন নিগম লিমিটেড৷ এই মাস্টার প্ল্যানে থাকবে ৫০ আসনের একটি লজ নির্মাণ, মন্দিরের চারপাশে বেড়া নির্মাণ, কল্যাণ সাগরের চারপাশে পাকা ড্রেন নির্মাণ, মন্দিরের সৌন্দর্যায়ণ, কল্যাণ সাগরের চারপাশ সৌন্দর্যায়ণ, পাঁচটি শৌচালয় নির্মাণ, সি সি টিভি স্থাপন, মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন, মাতাবাড়ী থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত রোপওয়ে স্থাপন, কল্যাণ সাগরের দীঘির জল বিশুদ্ধকরণ, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, তীর্থ যাত্রীদের জন্য যাত্রীশেড নির্মাণ, মাটির নীচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন টানা,বর্জ্য পদার্থ বহনের জন্য একটি গাড়ীর ব্যবস্থা করা, মন্দিরের চারপাশে সবুজায়ন করা প্রভৃতি৷ সভায় গোমতী জেলার জেলা শাসক তুষার কান্তি দেবনাথ আরও জানান, বর্তমানে মাতাবাড়ী মন্দিরের ১২৯৫ কিলোগ্রাম স্বর্ণ, ৬৫১৭৬ কিলোগ্রাম রূপা, ২৯ গ্রামের একটি মুক্তার নেকলেস এবং মুদ্রা রয়েছে ১ ইউ এস ডলার৷ এছাড়াও নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৩২ টাকা৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূণ্যার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মাতাবাড়ী মন্দিরের যে স্বর্ণ বা রূপা রয়েছে তা মন্দিরের স্বর্ণালঙ্কার বা উপহার দান করেছিলেন সেগুলিকে নিয়ে মন্দিরের পাশে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, কল্যাণ সাগরের দুটি ঘাট খোলা রেখে অন্যগুলি বন্ধ করতে হবে৷ এছাড়াও কল্যাণ সাগরের পাড়ে আট-দশটি স্নানাগার গড়ে তুলতে হবে৷ কল্যাণ সাগরের জল যাতে দুষিত না হয় সেজন্য বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দিতে বিধিনিষেধ লিখে রাখতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মন্দিরে ফটোগ্রাফারের ব্যবস্থা রাখবো৷ তীর্থযাত্রীরা যারা ফুটো তুলতে চান তারা নায্যমূল্য দিয়ে এখান থেকে ফটো তুলতে পারবেন৷ তিনি বলেন, মন্দিরের চারপাশে খুব দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে৷ লাইসেন্স ছাড়া কোন হোটেল চালু রাখা যাবেনা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন তীর্থযাত্রীরা যাতে প্রতিদিন মার পূজোর প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে৷ এছাড়াও কল্যাণ সাগরের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক ও আরক্ষা প্রশাসনকে যুক্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার জন্য জেলা শাসককে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৈঠকে পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, বিধায়ক বিপ্লব ঘোষ, মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন, বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ কুমার, মাতাবাড়ীর ডি এফ ও শক্তিকান্ত সিং, পর্যটন দপ্তরের সচিব অলিন্দ রাস্তোগি প্রমুখ মাতাবাড়ী মন্দিরের সার্বিক উন্নয়নে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করেন৷ বৈঠকে রাজস্ব দপ্তরের যুগ্ম সচিব শঙ্কর চক্রবর্তী এবং মাতাবাড়ী মন্দিরের পুরোহিত চন্দন চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন৷
2018-07-19