
পূর্ব খাসিপাহাড়ের জেলাশাসক পিটার এস ডখার জানিয়েছেন, নাগরিকদের জীবন-সম্পত্তি সুরক্ষার খাতিরে প্রশাসন কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে। অশান্তির বাতাবরণ বজায় থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জানান জেলাশাসক ডখার। যে খবর নিয়ে এত হাঙ্গামা, সে খবরের কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। আহত দুজনই জীবিত, শঙ্কামুক্ত। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা যে বা যারা করেছে, তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাস চালকের ওপর যারা হামলা চালিয়েছিল এবং পরবর্তীতে যারা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পালটা হামলা চালিয়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শহরের মটফ্রান (বড়বাজার) এলাকায় সংঘটিত এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বড়বাজার এলাকার পাঞ্জাবি লেনে ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়্যাল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর অন্তর্গত একটি সরকারি মিনি সিটিবাস স্থানীয় এক পাঞ্জাবি তরুণীকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা মেরে বাসটি দাঁড় করিয়ে তরুণীকে ‘অশ্লীল গালিগালাজ’ করে খাসি জনগোষ্ঠীর বাসের খালাসি। ঘটনাটি দেখেন পাঞ্জাবি লেনে উপস্থিত কতিপয় যুববাসিন্দা। তাঁরা বাসের খালাসিকে নামিয়ে বেধম মার মারেন। পুলিশ এসে উন্মত্তদের প্রতিহত করে আহত দুজনকে (খাসি জনগোষ্ঠীয়) নিয়ে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করে। এরই মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় বিকেলের দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, আহত দুজনের একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে সময় লাগেনি। দলে দলে উন্মত্ত জনতা পাঞ্জাবি লেনে এসে হামলা করতে ছুটেন। ইত্যবসরে ফের সন্ধ্যারাতের দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন আরও একজন। এই খবরে ঘৃতাহুতি পড়ে। রাতেই গাড়ি বোঝাই করে দলে দলে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আসতে থাকে প্রায় দুই থেকে তিনশো উন্মত্ত জনতা। শুরু হয় পাথর ছোঁড়া, আগুন ধরানোরও চেষ্টা হয় বলে খবর। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছুটে আসে অ্যান্টি-রায়ট বাহিনী, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী এবং সশস্ত্র নিরাপত্তাবাহিনী।
এর পরই শুক্রবার ভোররাত চারটেয় জারি করা হয় সান্ধ্যআইন। শিলঙের লুমডিয়েগিরি থানা এলাকা-সহ জাইয়াও মাওখার, উমসহসুন, রিয়াটস্মাথিয়া, ওয়াহিংডহ, মিশন, মওপ্রেম, লামাভিলা, কোয়ালাপট্টি, ওয়াহথপব্রু, সানি-হিল এবং উমশিরপি ব্রিজ এলাকা ছাড়া ক্যানটনমেন্ট মাওলংহাট অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালীন সান্ধ্যআইন জারি করেছেন জেলাশাসক পিটার এস ডখার। তাছাড়া গতকাল থেকে গোটা শিলঙে রাত ১০টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নাইট কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে গুয়াহাটি-শিলং রোডে নাকা-তালাশি চালায় পুলিশ ও আধাসেনারা। তাছাড়া স্পর্শকাতর এলাকা বড়বাজার এলাকায় বাইরের কোনও গাড়িঘোড়াও রাত থেকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শিলঙের স্পর্শকাতর এলাকায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।
এরই মধ্যে আজ কারফিউ কবলিত বড়বাজার এলাকায় ঢুকে পড়ে কতিপয় দাঙ্গাবাজ। তবে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের তাড়িয়ে দেয় নিরাপত্তাবাহিনী। খবরে প্রকাশ, আজ বেলা একটা এবং বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় মারমুখি জনতা পেট্রোল বমও ছুঁড়ছে। সুযোগ পেলেই কোনও না-কোনওভাবে হামলা করার চেষ্টা হচ্ছে।
মওলাই এলাকায় আজ শনিবার গুয়াহাটি থেকে শিলং আসছিল পর্যটকদলের দুটি গাড়ি। এগুলোতে ভাঙচুর করার পাশাপাশি যাত্রীদের নামিয়ে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ এসে পর্যটকবাহী গাড়িগুলিকে গুয়াহাটির উদ্দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। একটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুরোপুরি ভস্ম করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তাদের বিরুদ্ধে কোনও খবর এবং ফটো সম্প্রচার বা প্রকাশ না করতে খবর সংগ্রহকারী সংবাদিকদের কড়া হুলিয়া জারি করেছে দাঙ্গাবাজরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিরোধে বন্ধ ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা।