কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন উদার মানসিকতার অগ্রদূত ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মে৷৷ আমরা ত্রিপুরাকে একটি সর্বশ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ণ দেখেছি৷ এই স্বপ্ণে পূরণে ছাত্রছাত্রী সহ যুব শক্তিকে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে৷ কারণ ছাত্রছাত্রীরাই আগামী দিনে ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ৷ আজ রবীন্দ্রভবনে কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথাগুলি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, আজ রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে যথাযোগ্য মর্যাদায় নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে৷ শুধু ত্রিপুরা নয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এমনকি বাংলাদেশেও শ্রদ্ধার সঙ্গে নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন নজরুল ছিলেন একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ৷ তিনি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর মেধাশক্তির মাধ্যমে অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা করেছিলেন৷ আর্থিক সংকটের কারণে তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে হয়৷ পরবর্তীতে তিনি আবার সাহিত্য কর্মে ফিরে আসেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর অধিকাংশ কবিতা, গল্প, উপন্যাসে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছিলো৷ তাই তাঁকে আমরা বিদ্রোহী কবি নামেই সবচেয়ে বেশি জানি৷ তাঁর রচিত কবিতা ভারত, বাংলাদেশ দুই দেশেই সমান জনপ্রিয়৷ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো৷ তিনি বলেন,নজরুল ইসলাম পরাধীন ভারতবর্ষকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একসূত্রের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ সে কারণেই আজকের দিনেও তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ততটাই রয়েছে যতটা পরাধীন ভারতবর্ষে ছিলো৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নজরুল ইসলাম ছিলেন উদার মানসিকতার অগ্রদূত৷ তিনি তাঁর সন্তানদের নামও বিভিন্ন ভাষার অনুসরণে রেখেছেন৷ নজরুলের মাহাত্মের জন্যই প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন৷ নজরুল তাঁর কবিতা, গল্পের মাধ্যমে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নজরুলকে স্মরণ করার পাশাপাশি ভারতের মহন মনীষী যেমন বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে হবে৷ কারণ নজরুলের মতো তাঁরাও স্বাধীনতা আন্দোলনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন৷ তংাদের লেখনীর মাধ্যমেই পরাধীন ভারতবাসীর মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলো৷ তিনি বলেন, রাজ্যের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে নজরুল ইসলামের চিন্তাধারার মানসিকতাকে পৌঁছাতে হবে৷ প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরী করতে হবে যে, দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মেধাশক্তির মাধ্যমে খ্যাতি লাভ করা যেতে পাবে৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ার লক্ষ্যে অবিরল কাজ করে চলেছেন৷ সেই কর্মযজ্ঞে আমাদেরও সামিল হতে হবে৷

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, নজরুল ছিলেন মানুষের কথা, মার্টির কথা, সাম্যবাদ ও সম্প্রীতির কথা বলার কবি৷ তৎকালীন সমাজে তিনি তাঁর কবিতায় জাতীয় সংহতির সঙ্গীত রচনা করেছেন৷ তিনি ধর্ম-বর্ণ -জাতপাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ তিনি বলেন, কবি নজরুলের কবিতায় আমরা নারীর মর্যাদার কথা খুঁজে পাই৷ তিনি একাধারে যেমন কবি ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, নাট্যকার৷ শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্য কবি নজরুলের প্রতিভার নানা দিক তুলে দরে বলেন, আমাদের রাজ্যের আনাচে কানাচেও এরকম প্রতিভা লুকিয়ে আছে৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কর্তব্য হবে এসব প্রতিভাদের খুঁজে বের করে সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটানো৷ তিনি  বলেন, আজকের অনুষ্ঠান খুবই সুন্দর হয়েছে৷ এজন্য তিনি শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এমন মহান ব্যক্তিদের জন্মদিন উদযাপন করার সাথে শিক্ষক -শিক্ষিকারা যেন ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেন৷ শুধু অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্যেই যেন সব সীমাবদ্ধ না থাকে৷ রবীন্দ্র-নজরুলের মতো মানুষের ভাবধারায় ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করে তোলা শিক্ষা দপ্তরের সাথে যুক্ত সকলের কর্তব্য ও দায়িত্ব৷ প্রকৃত মানুষ তৈরীতে যেন তারা নিজেদের সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন৷

বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত নজরুল সঙ্গীত প্রতিভা পুরস্কার বিতরণ করা হয় আজকের অনুষ্ঠান মঞ্চে৷ পুরস্কার প্রাপক মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়া সরকার এবং উদয়পুরের নেতাজী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী তিনি রায়কে পুরস্কার প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পুরস্কার হিসেবে তাদের স্মারক, মানপত্র এবং ৫ হাজার টাকার নগদ অর্থরাশি প্রদান করা হয়৷

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক পঙ্কজ মিত্র, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন অধিকর্তা রঞ্জিত দেবনাথ, বিশিষ্ট শিল্পী ঝর্ণা দেববর্মণ এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা উত্তম কুমার চাকমা৷ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নজরুল সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে৷ উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে সোনামুড়া নজরুল মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রীরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *