
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি দিল্লির এক অভিজাত হোটেলের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় সুনন্দা পুষ্করকে৷ এই মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই রহস্য ঘনীভূত হয়৷ প্রাথমিকভাবে জানা যায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন৷ তদন্ত শুরুর পর উঠে আসে বিষপ্রয়োগে মৃত্যু হয়েছে সুনন্দা পুষ্করের৷ এই ঘটনায় সোমবার দিল্লি পুলিশ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেটের বিচারক ধমেন্দ্র সিং এর কাছে এই চার্জশিট জমা করে৷ ফাইল হওয়া এই মামলায় আইপিসি-র দুটি ধারার উল্লেখ রয়েছে, একটি ৪৯৮ এ (স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মহিলাদের ওপর অত্যাচার) এবং ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া) ৷ জানা গেছে, ২৪ মে এই চার্জশিটের ভিত্তিতে থারুরকে সমন পাঠানো হবে ৷
২০১৪র ১৭ জানুয়ারি এক পাঁচ তারা হোটেলের ঘর থেকে সুনন্দা পুষ্করের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা গিয়েছিল মৃত্যুর কারণ বিষক্রিয়া ৷ রক্তে অ্যালজোলামের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল পাশাপাশি রুমে ঘুমের ওষুধ ছিল ৷ তবে ঠিক কোন বিষের প্রভাবে মৃত্যু তা বোঝা যায়নি ৷ অটাপ্সি রিপোর্টে সুনন্দার দেহে প্রায় ১৫ টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল ৷ যার কোনটাই হয়ত মৃত্যুর কারণ নয় ৷ তবে একদম তাজা দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল যাতে একটি ইঞ্জেকশন ও কিছু কামড়ের দাগ ছিল ৷ পাকস্থলিতে অধিক পরিমাণে অ্যালপ্রাজোলামের উপস্থিতিও ধরা পড়েছিল এইএমএসে-র চিকিৎসকদের রিপোর্টে ৷ এরপর এফবিআইয়ের ভিসেরা রিপোর্টে পাওয়া যায় আরও কিছু তথ্য ৷ জানান যায় সুনন্দা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন ৷ তার কোনও রকমের ওষুধ প্রয়োজন ছিল না ৷ একইসঙ্গে তাঁর শরীরে অ্যাপ্রাজোলাম ও হাইড্রক্সি ক্লোরিনের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ৷
এদিকে সুনন্দার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগেই তার স্বামী শশী থারুরের সঙ্গে এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের সম্পর্ক সবার সামনে আসে । সুনন্দার মৃত্যুর পর ব্যকপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শশী থারুরকে। জানা যায়, মৃত্যুর ঠিক দু’দিন আগে শশী থারুর সঙ্গে কেরল থেকে দিল্লি আসেন সুনন্দা। বিমানেও তারা দুজন বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর দিল্লি বিমানবন্দরে শশী থারুরকে ছেড়ে ওই পাঁচ তারা হোটেলে ওঠেন সুনন্দা। প্রথমটাই পুলিশ সুনন্দা পুষ্করকে বিষ দিয়ে হত্যাঁ করা হয়েছে বলে খুনের মামলা রুজু করেছিল। কিন্তু অভিযোগে কারুর নাম ছিল না। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপর বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মমনিয়ম স্বামী দিল্লি হাইকোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেন ৷ যেখানে তিনি সুনন্দার মৃত্যু তদন্তে সিবিআইয়ের হস্তক্ষেপ চান ৷
চার বছর আগের ওই ঘটনায় সুনন্দা পুষ্কর ‘নিজেই নিজেকে হত্যা’ করেছেন বলে আজ পেশ হওয়া চার্জশিটে জানানো হয়েছে ৷ তাই কারোর বিরুদ্ধ হত্যার চার্জ গঠন হয়নি ৷ তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই শশী থারুরের | চার্জশিটে বলা হয়েছে বিবাহ পরবর্তী মত পার্থক্যের জেরে একজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ায় খুনের অভিযোগ আনা যায়নি ৷ ২৪ মে এই চার্জশিটের ভিত্তিতে থারুরকে সমন পাঠানো হবে ৷ সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন থারুরকে একমাত্র আদালতই সমন পাঠাতে পারে ৷