কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার৷ মধ্য বয়স্ক দিদিমণি৷ সেন্টারে কচি কাঁচা ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা খুব জোরে দশ থেকে পনের জন৷ দিদিমণি কচি কাঁচাদের পড়াচ্ছেন৷ একদিকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চেচামেচি৷ অন্যদিকে দিদিমণির বেত দিয়ে টেবিল ছড়ানোর শব্দ৷ সকাল বেলা যেন এক ব্যস্ততার পরিস্থিতি৷ এক সময়ে দিদিমণিকে বলতে শোনা গেল- আমার সাথে তোরা বল, অ আকার ম আম৷ ছোট ছোট ছেলেরাও সুর করে তাই পড়ছে৷ দিদিমণির পড়ানোর ঢং শুনে যেকোন শিক্ষিত, যাদের বলেন সম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে থমকে দাঁড়াবেন৷ কেননা, দিদিমণি নিজেই জানেন না, তিনি কচি কাঁচা শিশুদের মাথা খাচ্ছেন৷ কেননা, আম বানান অ আকার দিয় হয় না৷ বানান টা হবে আ – ম- আম৷ দিদিমণির কাছে কিন্তু ভুল বলেনেটা শুদ্ধ৷
প্রশ্ণ হল, দোষটা করে? দিদিমণি এমন বানান কার কাছ তেকে শিখলেন? নিশ্চয় কোনও মাস্টারবাবু দিদিমণিকে এভাবে বানান শিখিয়েছেন৷ এবং দিদিমণিও তার কচি কাঁচা ছাত্র ছাত্রীদেরকে এভাবে আম বানান শিখাচ্ছেন৷ এবং দিদিমণিও তার কচি কাঁচাদের মধ্যে কেউ বড় হয়ে শিক্ষক হলে সেও তার ছাত্রদেরকে এভাবে ভুল আম বানান শেখবে৷
আসলে রাজ্য শিক্ষার মেরুদন্ডের কোথাও যেন চিড় ধরেছে৷ এমন চিড় ধরার পেছনে আসল কারণটি কিন্তু আজও অধরা৷ তাইতো অবলীলায় চলছে এই ধরনের ভুল বানান শেখা এবং ভুল উচ্চারণ করা৷ সব দিদিমণির ক্ষেত্রে যে এমন হচ্ছে তা নয়৷ কিছু কিছু দিদিমণির ক্ষেত্রে ভুলের প্রবনতা দেখা যায়৷ শুধু দিদিমণি নয়৷ একাংশ শিক্ষিত ব্যক্তিও অশুদ্ধ উচ্চারণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ যেমন তিনে আট (৩৮) এ সংখ্যাটিকে অনেকে আইত্রিশ উচ্চারণ করেন৷ কিন্তু কোন ধারাপাতে আইত্রিশ লেখা আছে তা জানা নেই৷ কিন্তু বর্তমানে আইত্রিশ শুদ্ধ উচ্চারণ হিসাবে স্বীকৃত৷ এই আইত্রিশ কি করে আইত্রিশ হল, তা খতিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে বটে৷ তেমনই অনেকে বলে থাকেন- ভাই নানাহ ঝামেলায় আছি৷ নানাহ শব্দটি কোন বাংলা অভিধানে আছে তাও জানা নেই৷ এক্ষেত্রে শুদ্ধ উচ্চারণ হবে – ভাই নানা ঝমেলায় আছি৷ এক্ষেত্রে হ অক্ষরটি জুড়ে দিলে নানা শব্দটি ভারাক্রান্ত করা হচ্ছে বইকি৷ তেমনই লাগাতার শব্দটি হয়ে যাচ্ছে লাগাতর৷ আবার কিছু কিছু শব্দ আমরা সংসৃকত ভাষায়ও উচ্চারণ করছি৷ যেমন স্মরণ এ শব্দকে অনেকে অনেকে উচ্চারণ করেন এসমরণ৷ আসলে তা হবে সরণ৷ এক্ষেত্রে সংযুক্ত ম অক্ষর উহ্য থাকে উচ্চারিত হয় না৷ যেমন ইংরাজিক হাউ এ শব্দটি হাওয়ার বলে না বলেন আওয়ার৷ এখানে এইচ শব্দটি অনুচ্চারিত থাকে৷ তেমনই স্বামী, স্মৃতি, সরস্বতী এ জাতীয় শব্দগুলোর সংযুক্ত অক্ষরটি উচ্চারিত হয় না৷ কিন্তু অনেকে এ জাতীয় শব্দ গুলোর উচ্চারণ সংসৃকতে করে থাকে৷ তাইতো দোষ শুধু দিদিমণির নয়৷ দোষ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার৷ তাইতো চুপ করে থাকাতো বুদ্ধিমানের কাজ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *