BRAKING NEWS

শান্তির আবেদন উপেক্ষা করে সন্ত্রাস রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে, প্রশাসন কুম্ভনিদ্রায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ মার্চ৷৷ বিজেপি আইপিএফটি জোট ৪৩ টি আসন পেয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পর রাজ্যে শান্তি সম্প্রীতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ৷ কিন্তু সেই আহ্বান উপেক্ষা করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একাংশ অত্যুৎসাহীরা সন্ত্রাস শুরু করেছে৷ তাতে রাজ্যের সার্বিক শান্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে৷ পরিস্থিতি মোকালোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক৷ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গিয়েছে, বিশালগড় বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন কড়ইমুড়া সুকলের পাশে নরু আহমেদ নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালনো হয়৷ তবে কে বা কারা ভাঙচুর করেছে সেই বিষয়ে প্রামাণ্য কোন তথ্য মিলেনি৷

অন্যদিকে, বক্সনগরে সজল হুসেন এবং কালসার মিয়া নামে দুই দুসৃকতি সাংবাদিকদের উপর হামলা করে বলে অভিযোগ৷ শহর আগরতলার কাছে বণিক্য চৌমুহনীর পশ্চিম নোয়াবাদী এলাকায় করিম মিয়াকে মারধর করা হয়েছে৷ স্থানীয় আমতলী বাজারের সুকলের পাশে সিপিএম পার্টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর মিলেছে৷ শহরের রাজনগর বর্ডার গোলচক্কর এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা হুজ্জুতি চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ স্থানীয় বাসিন্দা খোকন মিয়ার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ তাছাড়া জিরানীয়া এডিসি চৌমুহনীতেও বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বাড়ি ঘর ছেড়ে অনেকেই পালিয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন৷ জিরানীয়া কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা বেচা মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ৷

সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দননগর সুকলের সামনে সিপিএম পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে৷ লাড্ডু চৌমুহনী বাজারে পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছে সিপিএমের৷ জিরানীয়ার মুসলীম পাড়াতেও ভাঙচুর করা হয়েছে পাঁচটি বাড়িতে৷ এলাকারই কলাবাগান পাড়ায় স্থানীয় প্রধান ও উপপ্রধানে আবু মিয়া ও জুহেরা বেগমের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, রানিরবাজার চা বাগান এলাকায় বিজয় ভৌমিকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলে জানা গিয়েছে৷

বিজেপি নেতারা অবশ্য সন্ত্রাসে যুক্তদের হুশিয়ারও করে দিয়েছেন৷ কিন্তু নেতাদের কমান্ড মানতে চাইছে না নিচুতলার অত্যুৎসাহী কিছু কর্মী সমর্থক৷ তারা হিংসায় লিপ্ত হচ্ছে৷ ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর চেষ্টাও চালাচ্ছে অনেকেই৷ বাধা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দল৷ তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে প্রায় সর্বত্র৷ গ্রামীণ এলাকায় হিংসাত্মক ঘটনা বাড়ছে৷ হিংসা লিপ্তদের বড় একটা অংশ আকন্ঠ মদ্যপান করে এসব ঘটনা সংগঠিত করে চলেছে৷ বিভিন্ন জায়গায় দোকান পাট ভাঙচুর, দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে৷ সম্পদহানীর ঘটনাও ঘটে চলেছে৷ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস দখল করে নিয়েছে আইএনটিইউসি সমর্থকরা৷ জনশ্রুহিল দীঘ৩ ২৫ বছর যে লাঞ্ছনা বঞ্চনা হয়েছে তারই প্রতিশোধ নিতে এসব ঘটনা সংগঠিত করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক প্রতিশোধ স্পৃহার দৌলতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে৷ ফলাফল ঘোষণার দিন থেকেই রাজ্যের সর্বত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে৷ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ৷ বাজার হাট, দোকান পাট, ব্যবসা বাণিজ্য অনেক জায়গাতেই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ বিজেপি নেতৃবৃন্দ ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দল ক্ষমতায় ফিরলে কোন ধরনের সন্ত্রাস হবে না৷ ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস টিইউজেএস জোট সরকারের আমলে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল সেইদিন ফিরে আসবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু দলীয় অনুশাসন মানছে না একাংশ কর্মী সমর্থক৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজেপি নেতৃবৃন্দকে আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করা জরুরী৷ অন্যথায় ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস টিইউজেএস  যে অপবাদের মুখোমুখী হয়েছিল বিজেপি জোটকেও সেই অপবাদের সম্মুখীন হতে হবে৷ বিজেপি নিশ্চিতভাবেই ক্যাডার ভিত্তিক দল৷ তাদের দলীয় অনুশাসন কঠোর হলে রাজ্যে শান্তি সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরে আসতে খুব বেশী সময় লাগার কথা নয়৷ রাজ্যের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগণ সেটাই প্রতাশ্যা করছেন৷

এদিকে, রবিবার প্রাক্তন বিধায়ক পবিত্র কর, প্রাক্তন রতন দাস এবং সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য সহ এক প্রতিনিধি দল রাজ্য পুলিশের ডি জি এ কে শুক্লার সাথে সাক্ষাৎ করে রাজ্যে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছে৷ অন্যদিকে, কৈলাসহরে প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা রাজ্যে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *