সংঘর্ষের ঘটনার পাল্টা অভিযোগে বিদ্ধ সিপিএম ও আইপিএফটি, নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাসে অস্থির পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, খোয়াই ও কৈলাসহর, ১২ ফেব্রুয়ারি৷৷ রাজনৈতিক হিংসায় নির্বাচনী মূহুর্তে রাজ্যের পরিবেশ বড়ই অস্থির হয়ে পড়েছে৷ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে সিপিএম ও আইপিএফটি৷ সোমবার তুলাশিখরে আইপিএফটি ও এনসিটির মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ সহ ১৫ জন আহত হয়েছেন৷ এনসিটির অনিমেষ দেববর্মাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ দুই দলের মধ্যে ঘটনায় পুুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে৷ প্রশাসনের তরফে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ এদিকে, কৈলাসহরে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার জেলা সভাপতি সহ তিন জন৷ অভিযোগ, সিপিএম কর্মীরা কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নীতিশ দে’কে আক্রমণের উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা সংগঠিত হয়েছে৷ কৈলাসহরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে৷

সোমবার তুলাশিখর বাজারে এনসিটির নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ সভায় এনসিটির প্রার্থী অনিমেষ দেববর্মার বক্তব্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ৷ জানা গেছে, অনিমেষ দেববর্মা বক্তব্যের জেরে আইপিএফটি কর্মীরা তাদের দিকে তেড়ে আসেন৷ এনসিটি কর্মীরাও পাল্টা মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন৷ দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে অনিমেষ দেববর্মা আক্রান্ত হন৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসলে পুলিশকেও মারধর করেন দুই দলের কর্মীরা৷ দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ৫ জন পুলিশ কর্মী সহ এনসিটির ৭ জন কর্মী ও আইপিএফটির ৩ জন কর্মী আহত হন৷ এদের মধ্যে অনিমেষ দেববর্মা গুরুতরভাবে আহত হন৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন৷

অভিযোগে জানা গেছে, ঐ এলাকায় সিপিএম কর্মীরা নির্বাচনী প্রচার করতে পারছিলেন না৷ তাঁদের আইপিএফটি কর্মীরা বাঁধা দিচ্ছিলেন৷ এরই মাঝে এনসিটি আজ নির্বাচনী সভা করেছে৷ কিন্তু, সভা চলাকালিন সিপিএমকে নিয়ে অনিমেষ দেববর্মার বক্তব্যে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের রূপ ধারণ করে৷ পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ এলাকায় বিশাল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি থমথমে বলেই জানা গেছে৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোন সময় দুই দলের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ বাঁধতে পারে৷

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় কৈলাসহরে কনকপুর এলাকায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নীতিশ দেব৷ তাঁর সাথে অন্যান্য কর্মীদের পাশাপাশি বিজেপি মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা বিলকিস জাহানও ছিলেন৷ অভিযোগ, কনকপুর এলাকায় সিপিএমের কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালান৷ এই ঘটনায় বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার ঊনকোটি জেলা সভাপতি মহম্মদ সেলিম খান সহ তিন জন গুরুতর আহত হন৷ সিপিএম কর্মীরা তাদের মারধোর করেছেন বলে অভিযোগ৷ বিজেপি প্রদেশ কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার সময় দলীয় প্রার্থী পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান৷ তিনি ছুটে গিয়ে সমস্ত ঘটনা পুলিশকে জানান৷ পুলিশ ছুটে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন এবং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান৷ এই খবর ছড়িয়ে পরতেই বিজেপি কর্মী সমর্থকরা নানা দিক থেকে ছুটে আসেন৷ তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিশাল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ জানা গেছে,মোহম্মদ সেলিম খান গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷ সেখানেও যেকোন সময় দুই দলের মধ্যে আরো বড় ধরনের সংঘর্ষ বাঁধতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

এদিকে, খোয়াই মোহকুমার তুলাশিখর বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় সিপিএম আইপিএফটিকে দায়ি করেছে৷ এক প্রেস বিবৃতিতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে খোয়াই মহকুমার তুলাশিখর বাজারে বিজেপি’র জোট সঙ্গী আইপিএফটি (এনসি) র সমাজদোরহীদের হাতে এনসিটি দলের এক নির্বাচনী সভা আক্রান্ত হয়েছে৷ তাতে এনসিটি দলের নেতা অনিমেষ দেববর্মা সহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন৷ আজ হাটবার থাকায় বাজারে প্রচুর দোকানপাট ছিল৷ সমাজবিরোধীরা সমগ্র বাজারে তান্ডব চালায়৷ তাতে দোকানিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷

কোনও রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী সভার উপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিপিআই(এম)৷ সাথে এই হামলার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছে৷ এই ঘটনা বিজেপি’র নির্বাচনী জোটের শরিক আইপিএফটি(এনসি) দলের গণতন্ত্র বিরোধী এবং সমাজবিরোধী সন্ত্রাসী ভূমিকা আবারও জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি সিপিএমের৷