BRAKING NEWS

ভোটের দামামা বাজল ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে, ১৮ ও ২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন, গণনা ৩ মার্চ

অভিজিৎ রায়চৌধুরী, নয়াদিল্লি৷৷ নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জানুয়ারী৷৷ ত্রিপুরা সহ মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের

বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের নির্বাচন ঘোষণা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার৷ ছবি-পিআইবি৷

বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন৷ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী ত্রিপুরায় এবং ২৭ ফেব্রুয়ারী মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ৩ মার্চ তিন রাজ্যের ফলাফল ঘোষণা হবে৷ বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার অচল কুমার জ্যোতি বলেন, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে ১০০ শতাংশ সচিত্র ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ সে মোতাবেক সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রও প্রদান করা হয়েছে৷ কিন্তু, নাগাল্যান্ডে ৯৭৯২ শতাংশ সচিত্র ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে এবং সে মোতাবেক সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র প্রদান করা গেছে৷ এদিকে, সন্ধ্যায় আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরণীকান্তি জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যের ৪০টি বিধানসভা আসনে ৪০টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হবে৷

এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরায় বর্তমান বিধানসভার মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হবে যথাক্রমে ৬ মার্চ, ৩১ মার্চ এবং ১৪ মার্চ৷ ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ ধারা ও ১৭২(১) ধারা এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা বিধানসভার বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্যকারিতা ক্রমে সাধারণ নির্বাচন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷

সংসদীয় ও বিধানসভা কেন্দ্রসমূহের পুনর্বিন্যাস, ২০০৮ অনুযায়ী মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা রাজ্যে মোট বিধানসভা আসন সমূহের অন্তর্গত তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত আসন সমূহের সংখ্যা হল, মেঘালয়ে মোট আসন ৬০, এর মধ্যে ৫৫-টি তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত, নাগাল্যান্ড মোট আসন ৬০, এর মধ্যে ৫৯ টি তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত এবং ত্রিপুরায় মোট আসন ৬০, এর মধ্যে ১০টি তপশিলি জাতি ও ২০ টি তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত৷

তিনটি রাজ্যে মোট ভোটদাতার সংখ্যা খসড়া তালিকা অনুযায়ী  ১ জানুয়ারী নির্ণয় করা হয়েছে তা হল, মেঘালয়ে খসড়া তালিকায় ১৭, ৬৮, ৫১৫  এবং চূড়ান্ত তালিকায় ১৮, ৩০, ১০৪ ভোটার, নাগাল্যান্ডে খসড়া তালিকায় ১১, ৬৩, ৩৮৮ এবং চূড়ান্ত তালিকায় ১১, ৮৯, ২৬৪ ভোটার, এবং ত্রিপুরায় খসড়া তালিকায় ২৫, ০৫, ৯৯৭ ভোটার এবং চূড়ান্ত তালিকায় ২৫, ৬৯, ২১৬ ভোটার৷

ত্রিপুরায় বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনের জন্য নির্ঘন্ট, ভোট গ্রহণ সম্পর্কে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ত্রিপুরায় সব মিলিয়ে ৬০ বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে৷ সেখানে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ২৪ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র পেশের শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার তারিখ ১ জানুয়ারি, প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ০৩ জানুয়ারি, ভোটগ্রহণের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি, গণনা হবে ৩ মার্চ৷ তিনি জানান, ৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের সমস্ত প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে হবে৷

এদিকে, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনের জন্য নির্ঘন্ট, ভোট গ্রহণ সম্পর্কে তিনি জানান,  সব মিলিয়ে দুটোতেই ৬০-টি করে বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে৷ সেখানে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ৩১ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র পেশের শেষ তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি, ভোট গ্রহণের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং গণনা হবে ৩ মার্চ৷ এই দুই রাজ্যেও ৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের সমস্ত প্রক্রয়া সমাপ্ত করতে হবে৷

তিনি আরো জানান, সচিত্র ভোটার তালিকা ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে ১০০ শতাংশ এবং নাগাল্যান্ডে ৯৭৯২ শতাংশ প্রকাশিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রও প্রদান করা হয়েছে রাজ্যগুলিতে৷  নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরায় ভোটগ্রহণকালে প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ই ভি এম (বৈদ্যুতিন ভোটগ্রহণ যন্ত্র) -এর সঙ্গে ভি ভি পি এ টি ব্যবহার করা হবে৷

এদিকে আগরতলায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক জানান, ৫ জানুয়ারী প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ২৫,৬৯,২১৬ জন ভোটার এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন৷ এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১৩,০৩,৪২০ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ১২,৬৫,৭৮৫ জন৷ এছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১১ জন৷ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানান, ২০১৩ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হয় সে সময় ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৩০৪১টি৷ এবছর ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩২১৪ টি করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৫৬৯ শতাংশ৷ তিনি জানান, প্রতি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র পিছু গড়ে ভোটার থাকছেন ৭৯৯ জন৷

মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরণীকান্তি জানান, ভোটের অন্তত ৭ দিন আগে সমস্ত ভোটারের কাছে যাতে সচিত্র ভোটার স্লিপ পৌঁছে যায় তার উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ সবক’টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র থেকেই যাতে ওয়েবকাস্ট করা যায় তার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান৷ একই সঙ্গে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে মহিলাদের সুবিধার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সর্বত্রই ভোটার সহায়তা কেন্দ্র থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৪০টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র যাতে শুধুই মহিলাদের দ্বারা পারিচালিত করা যায় তার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান৷ শ্রীরাম তরণীকান্তি জানান, রাজ্যে পাঁচ হাজারের বেশি সার্ভিস ভোটার রয়েছেন৷ তারা এবার ই টি বি পি এস পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট দেবেন৷ ভোটের সময় রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে এক প্রশ্ণের উত্ততে তিনি জানান, ভোটের জন্য রাজ্যে ৩০০ কোম্পানীর মতো আধা-সামরিক বাহিনী পাওয়া যাবে৷ ইতিমধ্যেই ২৫ কোম্পানী নিরাপত্তা বাহিনী রাজ্যে পৌঁছে গেছে৷ অবশিষ্ট বাহিনীও ধাপে ধাপে রাজ্যে পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানান৷ তিনি জানান, ভারতের নির্বাচন কমিশনের ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার সুদীপ জৈন নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রুটিন ভিজিটে আজ রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন৷

এদিন তিনি আরো জানিয়েছেন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৩৪ হাজার ৮৪৫ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি তিনি মেনে নিয়েছেন, ভোটার তালিকা নির্ণয়ে আধিকারীকদের ভুল ত্রুটি হয়েছে৷ তাদেরকে চিহ্ণিত করে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হবে৷ এদিকে, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও বহু ভোটারের বিরুদ্ধে আপত্তি জমা পড়ছে নির্বাচন দপ্তরে৷ সেগুলি স্ক্রুটিনি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *