BRAKING NEWS

টেটের কঠিন সিলেবাস, নিয়মিত বেতনক্রম, শিক্ষার অধিকার আইন, সুপ্রিম কোর্টের রায়, জটিল সমস্যায় রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন এক জটিল পরিস্থিতির শিকার৷ শিক্ষার অধিকার আইন মেনে টেট উত্তীর্ণ শিক্ষক প্রয়োজন মতো মিলছে না৷ ফলে, টেট’র সিলেবাস শিথিল হউক, চাইছেন পরীক্ষার্থীরা৷ এদিকে, টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকদের নিয়মিত বেতনক্রম দেওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী৷ অন্যদিকে, শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধন করে এককালীন ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক৷ কিন্তু, তাতেও চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের কোনভাবেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উর্দ্ধে গিয়ে চাকুরীতে বহাল রাখা সম্ভব হবে না বলে দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ ফলে, এই জটিল পরিস্থিতি আগামীদিনে শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷

মঙ্গলবার মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানান, টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকরা নিয়মিত বেতনক্রমের দাবিতে তাঁদের বক্তব্য যুক্তি সহকারের শিক্ষা দপ্তরের কাছে রেখেছেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের দাবির স্বপক্ষে বক্তব্যে যৌক্তিকতা রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের নিয়োগ নীতি অনুসারে একমাত্র টিপিএসসি ছাড়া অন্য সব চাকুরীতে ফিক্সড পে-তে নিয়োগ করা হয়৷ কিন্তু, টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকদের বক্তব্য, তাঁরা যোগ্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষা দিয়ে চাকুরী পেয়েছেন৷ তাই তাঁদেরও সারা দেশের সাথে সাযুজ্য রেখে নিয়মিত বেতনক্রম চালু করতে হবে৷

শিক্ষামন্ত্রী এবিষয়ে জানান, রাজ্য সরকারের টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকদের নিয়মিত বেতনক্রম চালু করার ব্যাপারে ভাবতে হবে৷ কারণ, তাঁদের দাবির স্বপক্ষ্যে যে বক্তব্য তাঁরা পেশ করেছেন তাতে যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে৷ তিনি বলেন, এখন টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকদের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়৷ কিন্তু, আগামীদিনে সংখ্যা অনেক বাড়বে৷ তা সত্বেও তাঁদের নিয়মিত বেতনক্রম চালু করার বিষয়ে ভাববে রাজ্য সরকার৷ অবশ্য, এই মুহুর্তে তা সম্ভব না হলেও, নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

এদিকে, টেট’র সিলেবাস শিথিল করা হউক চাইছেন পরীক্ষার্থীরা৷ কারণ, বেশ কয়েকবার টেট’র আয়োজন করা হলেও, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি৷ এরজন্য অবশ্য পরীক্ষার্থীদের মতে, সিলেবাস ভিষণ কঠিন৷ তাই সকলের পক্ষে সেই সিলেবাস অনুসারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ এই বিষয়টি রাজ্য সরকারকেও ভাবাচ্ছে৷ তা সত্বেও, সিলেবাস শিথিল করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে অন্তত তাই স্পষ্ট৷ টেট’র সিলেবাস শিথিল করার কোন সুযোগ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপাতত এই উদ্যোগ নেওয়ার কোন সুযোগ নেই৷ কারণ, এনসিটিই গাইডলাইন মেনেই টেট’র সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে৷ ফলে, তাতে কোনরকম বদল ঘটানো রাজ্যের একার পক্ষে সম্ভব নয়৷

এদিকে, চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের চাকুরীতে বহাল রাখার জন্য রাজ্য সরকার নতুন করে কোন কিছুই করতে না পারলেও৷ বিজেপি’র পক্ষ থেকে তাঁদের জীবনজীবীকা সুনিশ্চিতের প্রশ্ণে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে৷ সোমবার ক্যাবের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ বিভিন্ন রাজ্য এই আইনের অন্তর্গত এককালীন ছাড় দেওয়ার দাবি তুলেছে৷ তাই রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের সাথে সেই দাবিগুলিকে যুক্ত করে শিক্ষার অধিকার আইনে সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে আইনী জটিলতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

এক্ষেত্রে রাজ্যের চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদেরও চাকুরীতে বহাল রাখা সম্ভব হবে কিনা, এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় বের হওয়ার এক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে এককালীন ছাড় দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু, তখন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উর্দ্ধে গিয়ে কোন ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়৷ কেন্দ্রের যুক্তিতে যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মনে করেছে রাজ্য সরকার৷ তাই, সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীতে পুনর্বহাল কোন মতেই সম্ভব নয় বলে দৃঢ়তার সাথে জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ পাশাপাশি বলেন, সংসদের পক্ষেও এব্যাপারে কোন বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়৷ কারণ, কেন্দ্র শুধুমাত্র ত্রিপুরার জন্য আলাদা করে কোন আইনের সংশোধনী আনবে বলে মনে হচ্ছে না, বলেন শিক্ষামন্ত্রী৷ সাথে যোগ করেন, তবুও যদি চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের কোনভাবে উপকার হয়, তাতে রাজ্য সরকার অত্যন্ত আনন্দিত হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *