নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ অক্টোবর৷৷ ত্রিপুরার চরম আইন শৃঙ্খলার অবনতি, জনগণের নিরাপত্তাহীনতা, মাফিয়া ও পাচার কারবার বন্ধের জন্য কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছে প্রদেশ বিজেপি৷ সম্প্রতি সোনামুড়া সীমান্ত গ্রাম কালাপানীয়ায় একদল গরু পাচারকারীর হামলায় নৃশংসভাবে জখম হয়ে মৃত্যু হয় বি এস এফ ডেঃ কমাডেন্ট দীপক কুমার মন্ডলের৷ গোটা বিষয়টি শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং’র কাছে টেলিফোনে জানিয়ে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্পর্শকাতর এই চলমান ঘটনাগুলি নিয়ে কেন্দ্রের দৃঢ় অবস্থানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক৷
সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রদেশ বিজেপি সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক৷ তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে ত্রিপুরা করিডোর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে পাচার কারবারীদের৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন৷ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিশ্চুপ কেন প্রশ্ণ তোলেছেন সুবল ভৌমিক৷ তাঁর অভিযোগ, গরু পাচার কারবারী, নেশার কারবার চক্রের থেকে সি পি এম পার্টি কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন৷ সীমান্ত সংঘর্ষে জখম হয়ে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে বীরের সদগতি মেনে নেওয়া যায়৷ জনবহুল এলাকায় বি এস এফ জখন পাচার কারবারীর হাতে সুরক্ষিত নয় এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই, দাবী করেছেন সুবল ভৌমিক৷ মাফিয়াদের দখলে এখন রাজ্য৷ বাম জমানায় মাফিয়ারাজ খতম করতে বিজেপি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ দাবী করছে বলে জানান সুবল ভৌমিক৷
গত ১৫ অক্টোবর সোনামুড়া সীমান্তের বলের ডেপা এলাকায় গরু পাচারকারীদের সাথে সংঘর্ষে আহত হন বিএসএফের ১৪৫ নং ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কমাডেন্ট দীপক কুমার মন্ডল৷ ১৯ অক্টোবর শুক্রবার কলকাতার একটি বেসরকারী হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ আজ ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রদেশ সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক প্রদেশ বিজেপির তরফ থেকে এই বীর শহিদকে সশ্রদ্ধ প্রণাম এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন৷
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর রাষ্ট্রীয় কর্তব্য ভুলে গিয়ে এই বীর শহীদকে মৃত্যুতে কোন শোক প্রকাশ করেননি৷ এই হৃদয় বিদায়ক ঘটনায় তিনি নিশ্চুপ৷ এই বীর সেনানী আমাদের রাজ্যকে দুসৃকতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন৷ এই শহিদকে শ্রদ্ধা না জানানো এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন না করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকট করে তুলেছেন৷ প্রদেশ সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক আরও বলে যে ২০১৫ সালেও অন্য একটি ঘটনায় বিএসএফ সহ অন্য কয়েকজন দুসৃকতিকারী মারা গেলে আগরতলার ফায়ার ব্রিগেড চৌমুহনীতে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা শহীদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আগে মৃত দুসৃকতিকারীদের শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সুবল ভৌমিক আরও বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্রে সহ সোনামুড়ার গরু পাচার, ফেন্সিডিল ও কোরেক্সের অবৈধ বানিজ্যের মৃগয়া ক্ষেত্র৷ আর এই সমস্ত কাজে যুক্ত রয়েছে শাসকদলীয় নেতা নেত্রীরা৷ আর যে কারণে পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার ও নীরব দর্শক৷ এই বীর শহিদ দীপক কুমার মন্ডলকে হত্যা করে দুসৃকতিকারীরা এই বার্তা দিয়েছে যে, যেখানে বিএসএফের নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারণ মানুষ কি আশা করতে পারে?
প্রদেশ সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক বলেন, ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি উক্ত ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দারী করেন এবং দীপক কুমার মন্ডলের পরিবারের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের নেওয়া উচিত বলেও দাবী করেন৷ এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ডঃ অশোক সিনহা ও আইনজীবি কল্যাণী রায় ও উপস্থিত ছিলেন৷