BRAKING NEWS

বামেদের অস্বস্তিতে ফেলে ঋতব্রতকে গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য় করল কেন্দ্র

কলকাতা, ৩ অক্টোবর (হি. স.): বামেদের রীতিমত অস্বস্তিতে ফেলে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুরুত্বপূর্ণ একটি কমিটির সদস্য়

সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়৷

করল কেন্দ্র। কমিটির চেয়ারম্যান তৃণমূলের ডেরেক ও’‌ব্রায়েন। বহিষ্কার করার পর সিপিএম যখন সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কমিটি থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, তখন প্রায় নিঃশব্দে সেই কমিটিতে আবার মনোনীত হয়ে গেলেন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত। সংসদের ‘‌ট্রান্সপোর্ট, ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার কমিটি’‌র সদস্যদের নাম ঘোষিত হয়েছে। ঘটনাচক্রে, তাতে এক নম্বরে নাম রয়েছে ঋতব্রতর!‌
নতুন কমিটিতে ঋতব্রত থাকলেও সিপিএমের কাউকে রাখা হয়নি। ইতিহাস বলছে, নব্বইয়ের দশকে এই কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকেই তাতে বরাবর সিপিএমের জোরালো উপস্থিতি ছিল। সীতারাম ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কমিটিতে ছিলেন প্রবীণ নেতা অশোক মিত্র, অধুনাপ্রয়াত দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন সাংসদ নীলোৎপল বসু এবং বর্তমান সাংসদ তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।
সোমবারেও সিপিএমের এক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, তাঁরা ওই কমিটিতে ঋতব্রতর নাম আর পাঠাবেন না। কারণ, ঋতব্রত দল থেকে বহিষ্কৃত। বরং তাঁদের চেষ্টা থাকবে, যাতে ‘‌দলহীন সাংসদ’‌ ঋতব্রত সংসদের কোনও কমিটিতেই না থাকতে পারেন। ওই নেতা অবশ্য জানতেন না, কমিটি ইতিমধ্যেই গঠিত হয়ে গেছে!‌ সংসদের ওয়েবসাইটে চেয়ারম্যানের নাম–সহ কমিটির সদস্যদের নামের সবিস্তার তালিকাও রয়েছে।
ঋতব্রত বলেন, “‌এই কমিটির সদস্যদের নাম মনোনীত করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। আমি খুশি যে, উনি আমায় আবার কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। যাঁরা আমাকে পুনরায় এই কমিটিতে মনোনীত করেছেন, আমি তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই কৃতজ্ঞ। কমিটির নতুন চেয়ারম্যান ডেরেক ও’‌ব্রায়েনের নেতৃত্বে আমি বাংলার স্বার্থে কাজ করব।”
সিপিএমের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টানা ৮ বছর সংসদের এই স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর কমিটি পুনর্গঠনের সময় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান পদটি দেওয়া হয় সংসদে ক্রমশ ক্ষমতাবান হয়ে–ওঠা তৃণমূলকে। দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি তখন কমিটির চেয়ারম্যান করেছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিং–কে।
‌সংসদের বিভিন্ন কমিটি প্রতি বছরই পুনর্গঠিত হয়। তবে সাধারণত এক–একটি কমিটির মেয়াদ দু’‌বছর পর্যন্তও থাকে। কে ডি ২০১৬ পর্যন্ত ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ‘‌নারদ–কাণ্ডে’‌ কে ডি–র ভূমিকা প্রকাশ্যে আসার পর বিরক্ত মমতা গতবছর তাঁকে সরিয়ে চেয়ারম্যান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে। সম্প্রতি দলের সঙ্গে মুকুলের দূরত্ব প্রকট হওয়ার পর মমতা ডেরেককে ওই কমিটির জন্য চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করেন। নতুন কমিটিতে তাঁর অধীনেই কাজ করতে হবে ঋতব্রতকে। তাঁর সঙ্গেই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা, প্রফুল্ল প্যাটেল, রাজীব শুক্লার মতো ‘‌ওজনদার’‌ সাংসদ।
সংসদীয় রীতিনীতি বলছে, স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানরা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর মতো সুযোগ–সুবিধা পান। সংসদ ভবনে তাঁদের আলাদা দফতর থাকে। নামে পরিবহণ, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক কমিটি হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তত পাঁচটি দফতর এই কমিটির সদস্যদের ‘‌নিয়ন্ত্রণাধীন’‌। দেশ জুড়ে কাজ, ঘোরাঘুরি এবং দামি উপহার এই কমিটির সদস্যদের বাড়তি পারিশ্রমিক।
গুরুত্বের বিচারে সংসদের এই কমিটি প্রথম সারিতেই রয়েছে। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়েও ঋতব্রতর এই কমিটিতে আবার মনোনীত হওয়া ‘‌তাৎপর্যপূর্ণ’‌। এর আগে এই কমিটির সদস্য থাকাকালীন উপহার হিসেবে–পাওয়া একাধিক আইফোন যে ঋতব্রত সিপিএমের বিভিন্ন নেতাকে ‘‌প্রীতি উপহার’‌ হিসেবে দিয়েছিলেন, তাও আলিমুদ্দিনের অজানা নয়। সিপিএম সূত্রের খবর, ঋতব্রতকে ওই কমিটির সদস্য মনোনীত করায় ক্ষোভ জানাতে পারে সিপিএম। তবে কমিটি ঘোষণার পর তাতে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *