প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, এবার দেশের ওষুধ বিক্রেতাদের জন্য কেন্দ্র ভয়ংকর দাওয়াই আনিতে চলিয়াছে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বলা হইয়াছে বিক্রি কম দেখাইয়া কর ফাঁকি দেওয়া, ভূয়ো ওষুধ বিক্রি করা৷ ওষুধ মজুত থাকিলেও সরকার দাম বাঁধিয়া দেওয়ায় ইচ্ছাকৃত ভাবে তাহা বিক্রি না করা বা বিনা প্রেসক্রিপশানে ওষুধ বিক্রির কারসাজি বন্ধ করিতেই কেন্দ্রীয় সরকার নয়া বিধি আনিতে চলিয়াছে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি প্রস্তাবে স্পষ্ট বলিয়াছে ই-পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করিয়া সমস্ত ওষুধ কেনাবেচা করিতে হইবে৷ যে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখিয়াছেন তাঁহার রেজিস্ট্রেশান নম্বর পোস্ট করিতে হইবে ইত্যাদি৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে যে কয়টি আছে সেগুলি আরও বেশী কঠিন ও সমস্যাদীর্ণ৷ যেমনঃ বিল বা প্রেসক্রিপশন পিছু যত ওষুধ বিক্রি হইবে সেই টাকার এক শতাংশ এর মধ্যে যে অঙ্কটি বেশী হইবে তাহা ‘ট্রানজেকশন ফি’ হিসাবে প্রত্যেক দিন জমা দিতে হইবে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে৷ প্রতিযোগিতার বাজারে পাইকারী ওষুধ বিক্রেতাদের লাভ যেখানে ১-২ শতাংশ আর খুচরা বিক্রেতাদের লাভ ৫-৬ শতাংশের বেশী থাকে না সেখানে এই টাকা হইতে সরকারী কোষাগারে এক শতাংশ জমা দেওয়া অসম্ভব৷ ইহাতে মাঝারী ও ছোট ওষুধ ব্যবসায়ীরা পথে বসিবেন তাহাতে সন্দেহ নাই৷
ওষুধ ব্যবসায় ফাটকাবাজী রুখিতে কেন্দ্রীয় সরকার যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহা হইলে অনেক কেলেংকারী ধরা পড়িবে৷ ওষুধের আকাশ ছোঁয়া দামে সাধারণ রোগীরা বড় বেশী অসহায় অবস্থায়৷ ওষুধের ধার্য্য করা দাম কতখানি যুক্তি সংগত সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুসদ্ধান করা জনস্বার্থে অনেক বেশী জরুরী৷ ওষুধ ব্যবসায়ীদের অনেক কেরামতি আছে৷ চিকিৎসকদের উপঢৌকন দিয়া ওষুধ ব্যবসায় অনেক অনামী কোম্পানীও রোগীদের গলা কাটিয়া চলিয়াছে৷ বিভিন্ন জটিল রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধের বিরাট বোঝায় সমস্যা তীব্রতর হইতেছে৷ চিকিৎসা ক্রমেই গরীবের নাগালের বাহিরে চলিয়া যাইতেছে৷ আজ ডায়াবেটিস রোগ মহামারীর মতো অবস্থায় গিয়া দাঁড়াইয়াছে৷ অথচ এই রোগের ওষুধ, ইনসুলিনের দাম তো আকাশ ছোঁয়া৷ এইসব ওষুধের দাম না কমাইলে গরীব অংশের মানুষ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িবে৷ শুধু ডায়াবেটিস নহে ক্যান্সারের মতো বিপজ্জনক রোগীর সংখ্যা বাড়িয়াই চলিতেছে৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতি হইলেও চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়াই চলিতেছে৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভাল, দক্ষ ডাক্তার যেমন কাম্য তেমনি বড় ভূমিকা আছে ওষুধের৷ দেশের সর্বত্র ওষুধের দোকান ক্রমাগত বাড়িতেছে৷ বিভিন্ন রাজ্যে ওষুধের প্যাকেটে মুদ্রিত দামের খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে দশ বার শতাংশ ছাড় দেয় কোনও কোনও ওষুধের দোকান৷ অন্যদিকে মুদ্রিত দামেই বিক্রি করেন অনেক খুচরো দোকান মালিক৷ সুতরাং এই ঘটনা প্রমাণ করিতেছে খুচরো ওষুধ বিক্রেতারা মোটা টাকা লভ্যাংশ পাইতেছে৷ এই ফাটকাবাজী বন্ধে যদি কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নেয় তাহাকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানাইবে৷ ওষুধের দাম কমানোর প্রশ্ণে হয়তো বলা হইবে তাহা হইলে গুণগত মান কমিবে৷ আজ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক বেশী অনুসন্ধান করিতে হইবে৷ তড়িঘরি কোনও সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দিলে সমস্যা আরও বাড়িবে৷ তবে একথা অনেক বেশী সত্যি যে, ওষুধ শিল্প নিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্রেষণ করিয়া কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নিতেই হইবে৷
2017-08-21