নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ আগস্ট৷৷ সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাগুলোর মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা, সিপাহীজলা, গোমতী, খোয়াই ও ঊনকোটি জেলায় ৭৫ টি ত্রাণ শিবিরে এখনও ৯৯১৭ টি পরিবার আবস্থান করেছেন৷ আজ সকাল ১১টায় রাজ্যের সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কোর কমিটির এক বৈঠক সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক সহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, অর্থ ও রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিবগণ, পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক, আগরতলা পুর নিগমের কমিশনার এবং জল সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকারগণ উপস্থিত ছিলেন৷ বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতির উপর পর্যালোচনা করা হয় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হাওড়া নদীর বাঁধের রক্ষনাবেক্ষণ এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সমস্ত দপ্তরগুলিকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেস দেওয়া হয়েছে৷
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পশ্চিম ত্রিপুরার ৬২টি ত্রাণ শিবিরে ৯৬৪৬ টি, সিপাহীজলা জেলার ৭টি ত্রাণ শিবিরে ৬৩টি, গোমতী জেলার ১টি ত্রাণ শিবিরে ২টি, খোয়াই জেলার ৩টি ত্রাণ শিবিরে ১৭১ টি ও ঊনকোটি জেলার ২টি ত্রাণ শিবিরে ৩৫টি পরিবার এখনো রয়ে গেছেন৷
এছাড়া, রাজ্যের নদীগুলিতে জল বাড়ার কোন খবর নেই৷ কিছু কিছু বাড়িঘড়ে আগের জমা জল রয়ে গেছে৷ যদিও নদীর জলের উধবসীমা অনেকটা কম৷ আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি তথা প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ ত্রাণ শিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী, শিশুখাদ্য ইত্যাদি বন্টন অব্যাহত রয়েছে৷ রাজ্যের এবং জেলার আপতকালীন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলি ২৪ ঘন্টা কার্যকরী রয়েছে৷ রাজস্ব দপ্তর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে৷
এদিকে, বন্যার কবলে রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা৷ ধীরে ধীরে জল কমলেও এখনও বহু ত্রাণ শিবিরে শরণার্থীরা রয়েছেন, তারা ঘরে ফিরে যেতে পারছেন না৷ দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য সারা রাজ্যে ৬৮ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজস্ব মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ এরমধ্যে শুধুমাত্র পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাতেই ৫৩ টি শিবির খোলা হয়েছে৷ আগরতলা শহর ও শহরতলী এলাকায় খোলা হয়েছে ৩৬ টি শিবির বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মহাকরণে কয়েকটি দফতরের মন্ত্রী ও আধিকারিকদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন৷ এই বৈঠকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ লক্ষ্যনীয়ভাবে দুটি কমিটির একটিতেও রাখা হয়নি কোন মন্ত্রীকে৷ মহাকরণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, দলমতের উর্দ্ধে উঠে দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে সরকার সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
অন্যদিকে, বিজেপির তীব্র আক্রোশ এবং কটাক্ষের পর মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আজ বন্যা দুর্গতদের দেখতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে বের হলেন৷ এদিকে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্গত মানুষ এখনও ত্রাণ শিবিরে ছেড়ে তাদের নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না৷ দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা না বলা এবং তাদের অবস্থার খোঁজ খবর না নেওয়ায় বিজেপির তীক্ষ্ন শব্দ বানের পর আজ মুখ্য মন্ত্রী মানিক সরকার দুর্গতদের দেখতে ত্রাণ শিবির গুলো পরিদর্শনে বের হন৷ মুখ্য মন্ত্রী দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ত্রাণ সামগ্রী বন্টন নিয়ে কথাবার্তা বলেন৷ এদিকে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু নিচু এলাকা থেকে জল সড়তে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জেলা প্রশাসন ধারনা করছে৷ দুর্গতদের অধিকাংশই এখনও ত্রাণ শিবিরেই রয়েছেন৷ যারা ফিরে যেতে চাইছেন তাদের ফিরে যাবার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন৷ কিন্তু অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ শিবির খোলা রাখা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে৷
2017-08-14

