তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী৷ জাতীয় রাজনীতিতে তিনি নিজেকে তুলিয়া ধরিবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন৷ এই চেষ্টার মূলধন হইল প্রকাশ্যে বিজেপি সরকারের বিরোধীতা করা৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুণ্ডুপাত করিয়া বাহবা কুড়াইবার চেষ্টা করা৷ কিন্তু অঞ্চল ভিত্তিক রাজনীতিতে মমতা যেন একটু ব্যাকফুটে অবস্থান করিতেছেন৷ বিশেষ করিয়া ত্রিপুরা রাজ্যের ক্ষেত্রে এমন উপলব্ধি শতভাগ প্রযোজ্য৷ রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের অভিজ্ঞতা হইল— মমতার রাজনৈতিক জীবনে মস্ত বড় ভুল হইল এই রাজ্যের নেতা নির্বাচন৷ বলা যাইতে পারে, ত্রিপুরা রাজ্যে নেতা নির্বাচনে মমতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হইয়াছে৷ এবং তাহার খেসারত দিতেছে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস৷ বর্তমানে তৃণমূলের অবস্থা কংগ্রেসের চাইতে বড়ই করুর অবস্থা৷ কেননা, কংগ্রেস বর্তমানে বৃষ্টিতে ভিজা কাকের মতো বিধবস্ত হইলেও কংগ্রেসে যে দু’জন নেতা রহিয়াছেন তাহাদের পরিচিতি রাজ্যস্তরে রহিয়াছে৷ তাহারা হইলেন পিসিসির সভাপতি বীরজিৎ সিনহা এবং বনমালীপুরের বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়৷ এই দুইজন ছাড়াও আরও একজন বিধায়ক রহিয়াছেন৷ বর্তমানে তিনি ভীষণভাবে মৌনব্রত পালন করিতেছেন৷ তবে পিছনের দরজা দিয়া বিজেপির উমেদারি করিতেছেন৷ তিনি হলেন কংগ্রেসের চানক্যখ্যাত রতন লাল নাথ৷ বর্তমানে রাজ্য জুড়িয়া কংগ্রেস অস্তিত্বের সংকটে ভুগিতেছে৷ ইহার পরও পিসিসির সভাপতি কংগ্রেসের অস্তিত্ব জানাইয়া দিতেছেন৷ কিন্তু বর্তমানে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ভয়ানক বিপদের মধ্যে রহিয়াছে৷ রাজ্যস্তরে তেমন সর্বজন গ্রাহ্য পরিচিত নেতা নাই তৃণমূলে৷ তৃণমূল যেন সাইনবোর্ডহীন দলে পরিণত হইয়াছে৷ কিন্তু ১৩এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল রাজ্যে চাঙ্গা হইয়া উঠিয়াছিল৷ এই সময়ে তৃণমূলে যোগ দিয়াছিলেন কংগ্রেসের রতন চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের এক সময়ের পাঁচ বারের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত৷ যোগ দিয়াছিলেন জহর সাহাও৷ অবশ্য তাহার গুরুত্ব তেমন ছিল না৷ রতন চক্রবর্তী তৃণমূূলের দায়িত্ব পাইয়া রাজ্য জুড়িয়া চরকির মতো ঘুরিয়াছিলেন৷ ধীরে ধীরে তাহার সময়ে তৃণমূল চাঙ্গা হইয়া উঠিতেছিল৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হইল না৷ ২০১৬ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের আঁতাতে কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ক কংগ্রেস ছাড়িয়া তৃণমূলে যোগ দিলেন৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে তুলিয়া ধরিবার ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাবাসম্পন্ন নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কংগ্রেসের বিধায়ককের লুফিয়া লইলেন৷ সেই সময় তিনি হয়তোবা ভাবিয়াছিলেন যে, আকাশের চাঁদ হাতে পাইলেন৷ তিনি খুশিতে ডগমগ হইয়া রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে তৃণমূল আয়োজিত জনসভায় আসিয়া তাহার স্বভাবসুভ ভঙ্গিতে মঞ্চের এই প্রান্ত হইতে ওই প্রন্তে হাঁটিয়া হাঁটিয়া দলত্যাগী বিধায়ককের গুণগানে মুখর হইলেন৷ ঘোষণা করিলেন যে, রাজ্যে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হইল তৃণমূল৷ তাহার পর কি হইলো?
তৃণমূলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করিলেন নব্য তৃণমূলীরা৷ তাহাদের কাপ্তান দাবি করিলেন যে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হইলো তৃণমূল৷ সেই সাথে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করিতে লাগিলেন৷ নব্য তৃণমূলীদের কাপ্তানের আচরণে তৃণমূল ছাড়লেন রতন চক্রবর্তী ও সুরজিৎ দত্ত৷ তাহারা যোগ দিলেন বিজেপিতে৷ এই সময়ে নব্য তৃণমূলীদের কাপ্তান বুঝিয়া গিয়াছেন যে, তৃণমূলে থাকিয়া লাভ হইবে না৷ কেননা, বিজেপির উত্থান ঘটিতেছে৷ তাই তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইস্যুতে তৃণমূল ও সিপিএমের আঁতাদের প্রতিবাদে তার বাহিনী লইয়া তৃণমূল ছাড়িলেন৷ বর্তমানে তাহারা বিজেপিতে যোগ দিতে উদগ্রীব৷ ইহার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূল অস্তিত্বের সংকটে পড়িয়াছে৷ মমতা এই নব্য তৃণমূলীদের সম্যকভাবে বুঝিতে পারিরলেন না৷ এই ক্ষোভে মমতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় যথেষ্ট ঘাটতি রহিয়াছে বলিয়া রাজনৈতিক মহলের অভিমত৷ তাই জাতীয় রাজনীতিতে মমতা যতই ছড়ি ঘুরাইবার চেষ্টা করুক না কেন ত্রিপুরার ওথলা মাটিতে মমতার যে কোমর ভাঙ্গিয়া গিয়াছে তারা অবলীলায় বলা যাইতে পারে৷
2017-07-24
