নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুলাই৷৷ জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোেেধ গোটা রাজ্য ভয়ানক নজিরবীহিন সংকটে নিমজ্জিত হলেও রাজনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ণে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার প্রয়াসই লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ রাজনাথের নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে অবরোধকারীদের বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছিল৷ কিন্তু, আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাজ্যের উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়ের উপরই দায়িত্ব দিলেন৷ রাজ্যপাল বিবৃতি প্রচার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যথাযথ সরকারের কাছে পৌঁছাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ বিবৃতিতে অবরোধ আন্দোলন তুলে নিতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ আন্দোলনকারী আইপিএফটি নেতা এন সি দেববর্মা গভীর রাত পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহারের কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি৷ এদিক, গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতো বুধবার কংগ্রেসের ডাকে বন্ধও পরিস্থিতিকে আরো সমস্যাদীর্ন করে তুলেছে৷ পৃথক রাজ্যের ষড়যন্ত্র ও রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে ডাকা বন্ধ ত্রিপুরাকে আরো বেশী সমস্যাক্রান্ত করেছে৷ অবরোধ আন্দোলন থেকে সরে আসার পথ খুঁজতে আইপিএফটি নেতৃত্বও যে তৎপর তা নেতাদের দিল্লী দৌড়ঝাপ থেকে স্পষ্ট হয়েছে৷ সম্মানজনক পথে অবরোধ আন্দোলন থেকে কিভাবে সরে আসা যায় তা নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের বৈঠক চললেও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেনি৷ রাতে এন সি দেববর্মা জানিয়েএছন রাজ্যপালের বিবৃতি নিয়ে তারা আলোচনায় বসেছেন৷ সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি৷ নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সহসাই অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার হতে পারে৷
জাতীয় সড়ক অবরোধ, বুধবার ত্রিপুরা বন্ধের ডাক এবং মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও আন্দোলনের ফলে গোটা শহর অগ্ণিগর্ভ পরিস্থিতি হয়৷ জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ তুলে দিতে রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও আন্দোলনে সারা শহরজুরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ গোটা শহরে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে মুড়ে রাখা হয়৷ লক্ষ্য করার বিষয়, ক্রমেই রাজ্যের পরিস্থিতি জটিল আকার নিতে চলেছে৷
রাজ্যপাল তথাগত রায় আজ বিবৃতি প্রচার করে বলেছেন- ‘‘রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষত জাতীয় সড়ক নং ৪৪ এবং রেললাইনের উপর অবরোধ, নিয়ে রাজ্যপাল অত্যন্ত উদ্বিগ্ণ৷ অন্যান্য অবরোধের ঘটনাও ঘঠেছে এবং একটি বন্ধের ডাকও দেওয়া হয়েছে৷ এই সবের ফলে ত্রিপুরার সাধারণ মানুষের (অবরোধ সমর্থক সমেত) যন্ত্রনা এক অসহ্য অবস্থায় পৌঁছেছে৷
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন৷ রাজ্যপাল তাঁদের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা যেন অবিলম্বে সমস্ত অবরোধ তুলে নেন৷ এই আবেদন এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবার করা হচ্ছে৷ রাজ্য পাল এই সব রাজনৈতিক দলকে এও জানিয়েছেন যে তাঁদের যা বক্তব্য তা রাজ্যপাল যথাযথ সরকারের হাতে পৌঁছে দেবেন এবং তা বিবেচনা করতে অনুরোধ জানাবেন৷ এর পরে এর উপর কি সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা ঐ যথাযথ সরকারই ঠিক করবেন৷
রাজ্যপাল আরো একবার রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এবং সর্বসাধারনের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন যে অবরোধ যেন অবিলম্বে তুলে নেওয়া হয় এবং ত্রিপুরাবাসীর যন্ত্রণা যেন আর প্রলম্বিত না হয়৷’’
ত্রিপুরার রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে আইপিএফটির প্রতিনিধি দল৷ রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সঙ্গে তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ রাজভবন সূত্রে জানাগেছে, নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্র্মর নেতৃত্বে আইপিএফটির এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে৷ রাজ্যপাল তাদের রাজ্যবাসীর স্বার্থে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়ে আলোচনার পথ প্রশস্ত করতে বলেন৷ জানাগেছে, নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্র্ম রাজ্যপালের কাছে পৃথক রাজ্যের ইস্যু নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার দাবীক জানিয়েছেন৷ রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ তবে আগে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেবার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান৷ তবে রাজভবনে এই বিষয়ে কোন আশ্বাস নাদিয়ে নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্র্ম তার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন৷
রাজ্যের উদ্ভূত অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সক্রিয হলেন রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ ধারনা করা হচ্ছে আজ রাতের মধ্যে কোন সমাধান সূত্র খুঁজে বের করা সম্ভব হবে৷ আইপিএফটির চলতি অনির্দিষ্ট কালীন জাতীয় সড়ক এবং রেলপথ অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাজ্যের অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ আর এই অবরোধ মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে অবরুদ্ধ করেছে বিজেপি৷ সামগ্রিকভাবে রাজ্য প্রশাসন আজ উদ্ভট পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্রিয় হলেন রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ জানা গেছে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বদের দুপুরে আচমকা রাজভবনে ডাকা হয়৷ রাজভবনে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব এবং প্রভারী সুনীল দেওধর এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন৷ বৈঠক শেষে বিপ্লব কুমার দেব জানিয়েছেন, টানা নয় দিনের অবরোধে রাজ্যে যে সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য প্রথমেই উদ্বেগ প্রকাস করেছেন রাজ্যের রাজ্যপাল৷ তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজ্য সরকার যে ব্যর্থ তা্য রাজ্যপাল মেনে নিয়েছেন৷ রাজ্যপাল বিষয় গুলি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে অবরোধ মুক্ত করার আবেদন জানান৷ তিনি বিজেপি প্রতিনিধি দলকে এও বলেছেন আইপিএফটির অবরোধ প্রত্যাহার করে নেবার জন্য আজ তিনি সেই দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন৷ এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি সক্রিয ভূমিকা নেবেন৷ বিপ্লব দেব বলেন, রাজ্যপালের বক্তব্যে আমরা সন্তুষ্ট কারণ রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কথা রাজ্যপাল মেনে নিয়েছেন এবং তিনি নিজে সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ কিন্তু বিজেপির তরফে বলা হযেছে রাজ্যপালের আবেদন পার্টির রা্যজ কমিটির পদাধিকারীদের বৈঠকে আলোচনা হবে৷ এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীকে আর অবরুদ্ধ রাখা হবে কিনা৷ তবে বিপ্লব কুমার দেব আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপালের কথায় ধারনা করা হচ্ছে আইপিএফটি আজ অবরোধ তুলে নিতে পারে কারণ রাজ্যপাল ইতিমধ্যে তাদের কাছে আবেদন করেছেন এবং আইপিএফটির এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন৷
প্রসঙ্গত, আইপিএফটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেছে৷ ত্রিপুরার মুক্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আর্জি খারিজ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত নিল বলে জানা গেছে৷ আইপিএফটির প্রতিনিধি দলকে মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে৷ তারা যেন রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন৷ গত ১৬ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ফোন করে আইপিএফটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করার আর্জি জানান৷ সেই অনুযায়ী গতকাল রাজ্য সরকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল আজ মঙ্গলবার বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজুজু তাদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ খোদ কিরেন রিজুজু মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে সরকারী বিবৃতিতে জানানো হয়৷ কিন্তু পরবর্তী সময় বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব আইপিএফটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন৷ এর পর আজ দিল্লিতে অবস্থানরত আইপিএফটির প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না৷ তাদের রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়৷ জানা গেছে, সন্ধ্যায় রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায় আইপিএফটিও এক প্রতিনিধিদলকে রাজভবনে আলোচনার জন্য ডেকেছেন৷ দিল্লিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে৷
2017-07-19

